উৎসর্গ সখী তোমাকে

প্রেমপত্র সিরিজ

১।।
চলতে চলতে হঠাৎ হারিয়ে যাই যদি
খুঁজে কি নেবে সেদিন নিরঞ্জনা ;
ক্লান্ত আমার চোখের বন্ধ ইশারায় লিখবে কি প্রেম
ভালোবাসার গল্পগুলি আগের মতোই -
পাবো কি ফিরে আবার ; এই পথে কোনদিন
নিরঞ্জনা প্রতিদিন ||
বদলের শুরুটা হঠাৎ ; দেখা হয়ে গেলো সিনেমায়
পাশাপাশি তুমি আর আমি
কোনের ঠিকানায় ||
বাড়িয়ে দিই হাত , জড়িয়ে ধরি বুকে
বালি রাশি তবু উড়ে যায় - ফেলে যাওয়া পুরাতন ; ব্যাস !!
তুমি ; আমি আর নিরঞ্জনা : প্রথম পরিচয় ||
তারপর পরপর রোজরোজ নেশাতুর চাওয়া পাওয়া
এক পাতা ভরে লিখবে সাগরের জলে চোখে চোখে
কিভাবে বেঁচে আছে বুক ; নিরঞ্জনার অপেক্ষায় ||



২।।
রাস্তার ধারে পোস্ট দুটো পাশাপাশি
দরজা খোলা ; সুনসান বাস ট্রাম রাজপথ
দুটো চোখ দেখছে -- হাতে হাত
আঙুলের মিলনে আজ প্রথম পরিচয় ||
ঘড়ির কাঁটা এগোচ্ছে ; পড়ন্ত বিকেলের রোদ
পরিচয় যেন এরই ফাঁকে খুঁজে পেলো তার পরিচয় --
তুমি , আমি আর নিরঞ্জনা ||

বৃষ্টি হয়নি সেদিন ; তবে কে আর জানতো
বাইসের সেই চোখের বৃষ্টি ; ভিজিয়ে দেবে তিরিশের মন
ছেড়ে যাওয়ার আগেই মিলন ঘটবে ||
আরও এগিয়ে দেখা যাক ; পায়ে পায়ে ঘেষাঘেষি
ছবিটুকু আজও পড়ে আছে -- মুঠোফোন খুলে দেখি
পা নয় শুধু ; রাস্তার ধারে পোস্ট দুটো পাশাপাশি
তুমি , আমি আর নিরঞ্জনা ||

৩।।
সেই ভাঙা বেঞ্চ ;
সেই ছেঁড়া ঘাস ;
সেই পুরোনো সময়
ফিরে দেখা সেই মিলনের কাল ||
ব্যর্থ ভাষা ;
ব্যর্থ অভিলাষ ;
বারবার খোঁজে চেনা সেই হাতখানা
তুমি , আমি আর নিরঞ্জনা ||
জল ঝোরে বয়ে যায় ;
ভিজে যায় মাটি ;
প্রথম নয় তবু শেষ হতে চাওয়া
মিথ্যে স্বপ্নের বেড়াজালে আটকে পড়া
দুটি ফেলে যাওয়া রুমাল
তুমি , আমি আর নিরঞ্জনা ||

৪।।
আজকের সকালটা
কেমন অন্যরকম লাগছে --
প্রানখুলে হাসছে আকাশ ;
হালকা চুমু দুগাল ছুঁয়ে
পেরিয়ে গেলো হালকা বাতাস ;
নতুন করে বেঁচে উঠতে
সূর্যমূর্খী ধরা দিচ্ছে গানে ;
প্রিয়তমা যাই তবে , মন ভার
এসময় দরকার ; অল্প অপেক্ষার
মিলবো এখানেই একদিন
তুমি , আমি আর নিরঞ্জনা ||

হয়তো আদর ;
অনেক বেশি , ছুঁয়ে যাবে
অন্য হাতে , তোমার প্রাণে ---
সেদিন আমায় মনে করে ; মনে রেখো
আর আমায় ছাড়া চলতে শেখো
বসন্তের এই রাস খেলাতে
একবার খুঁজে দেখো  : পুরোনো রুমাল
গন্ধটাকে
মনে মনেই অচেনা সব
কবিতার পাতা ; ঘটনা ঠাসা
খুব লাগবে চেনা ;
তুমি , আমি আর নিরঞ্জনা ||

৫।।
ভাঙা দরজা ; খোলা হাওয়া ; রেলপথে লাগে ব্রেক
হকারের চিৎকার ; জোয়ারে ভাটায় ভেসে আসা প্যাসেঞ্জার
আর ছেড়ে যাওয়া ফাঁকা ইস্টিশন প্রেম ||
চুপচাপ বেঞ্চগুলো মুখে মুখে তাকিয়ে
ভেজা গা ; ফাঁকা পা ; বসে থাকে জমে থাকা
নীরব রাতের কুয়াশা কাটিয়ে ||
খোলা বুক ; শুয়ে সুখ ; ঠান্ডায় জড়িয়ে
একা একা ভাবে ওরা ; কি হবে এই রাতটুকু পেরিয়ে !!
ফাঁকা ট্রেন ; ফাঁকা বেঞ্চ ; ফাঁকা প্ল্যাটফর্ম
আর ঠোঁটে ঠোঁটে জেগে থাকা
দুজনার খোলা বুক আর ছেড়ে যাওয়া
ফাঁকা ইস্টিশন প্রেম ||

৬।।
কত তত্ত্ব চাপা পড়ে যায় ; ফেলে আসা অতিতের গভিরে ,
কত কান্না হারিয়ে যায় ; দুঃখের এই সমুদ্রে ,
জীবন আসে আবার চলে যায় ; সময়ের সাথে
শুধু কিছু কথা পড়ে থাকে স্মৃতি হয়ে ; মৃতদের পথে ।।
ভালবাসা কাঁচের তৈরি ; ভেঙ্গে যায় একদিন
তারপর ;জাল,বায়ু ;পৃথিবী;সবাই মিলে মিসে সবেতেই করে দেয় ’লীন ।।
কালের হাওয়া বয়ে গেছে কতবার
তবু ওদের দেখতে ফিরে আসে সবাই, ভগ্ন সভাঘরে সেজে ওঠে দরবার ।।
সেদিন দুঃখ কষ্টগুলো ওদের বুকে বৃষ্টি ঝরিয়েছিল অবিশ্রান্ত
তাই ওরা ঘুমিয়ে পড়েছে ; ওদের মন ; প্রান আজ সবই ভীষণ ক্লান্ত
শুধু একজন ছাড়া ---
এতো কফিন বন্দি ভিনদেশি দেখে ফিরলে ; দেখলে কী কবরখানা তার
যে তোমাকে আজও খোঁজে ; ভালোবাসে শুধু তোমায় নিরঞ্জনা ||

৭।।
আমি তখন তোমার কথা ভেবে চলেছি
দীর্ঘ পথের কোনো কিনারায় বসে ,
তুমি হয়ত ভাবছো আমায়
এক ক্লান্তিময়ী ব্যস্ত দিনের অবশেষে ।।
আমার ক্লান্ত চোখ তোমাকে খোঁজে
বিশ্বাসের আঙিনায় ,
তুমি হয়ত তখন স্বপ্ন আঁকো
নিজের মেঘের বিছানায় ।।
নদী , পর্বতের ওপারে এক টুকরো লাল আকাশ
নব কিরণে যেন স্বাগত জানায়
সিঁদুর মাথায় এ নব বধূর নতুন ঠিকানায় ।।
ভালোবেসে সখী এমন হাজার ছবি লিখব
জীবনের পাতাজুড়ে ,
তারপর একদিন তোমার কাঁধেই মাথা রেখে
পড়ে দেখব আমাদের ফেলে আসা কাহিনী
জীবনের অধ্যায় ভরে ।।
দেবী , ভাবনা দেখ আর নেই --
নির্মল আকাশ সামনে দাঁড়িয়ে ,
সময় হল একটু ভালবাসার , আদরকথায়
চলো না দিনটাকে দিই সাজিয়ে ।।

৮।।
চিঠি লিখে গেছি আনমনে তোমাকে প্রতিদিন ধরে ;
কিছু পৌছায় ; কিছু আবার আগেই হারিয়ে যায় ।।
অনেকে ঠাট্টা করে , তাই লিখতে আর সাহস পাই না ,
জানা নেই , তুমি কি ভাববে !!
এই শুনছ  , গত সপ্তাহে মায়ের কাছে গেছিলাম ,
তুমিও যাবে বলেছিলে সেদিন ; তবু আজ তোমায়
জিজ্ঞাসা না করেই চলে গেলাম ,
জানা নেই , তুমি কি ভাববে !!
গোলু আর গুলটির সাজানো সংসারটা ভেঙে গেছে অনেকদিন ;
তোমার স্বপ্ন ; আজও ধরে রেখেছি – কিন্তু তুমি ছাড়া সবটাই তো বৃথা
তাই না নিরঞ্জনা ??
সামনেই দুর্গাপূজা ; এক বছর আগের কথা মনে পড়ছে
কথায় কথায় খুঁজে পেয়েছিলাম জীবনের মানে ;
রাত জাগা দুটো চোখ বন্দি মুঠোফোনে ; সে-দিন সত্যি কি ফিরে আসবে আবার ?
নাকি এমনই অপেক্ষায় রাত কেটে যাবে দুজনার দুটি পথে
হারিয়ে যাবে গোলু আর গুলটি ; পুচু আর পুচকি অথবা সেই চেনা
তুমি , আমি আর নিরঞ্জনা ।।
চাকরিটা তুমি একদিন ঠিকই পেয়ে যাবে ; তোমার ক্ষমতা অসীম
পরীক্ষাটা আমিও উত্তীর্ণ হবো সেদিন ; তোমার বিশ্বাসেই ডানা মেলে ,
পৃথিবী ঘুরবে ; কালো থেকে একদিন আকাশ সেজে উঠবে লাল সিঁদুরে ;
না হওয়া প্রেমপত্রগুলো ; কবিতা হয়েই ঘুরে বেড়াবে লোকের ভিড়ে ;
প্রেমপত্র হয়ে ওঠা হবে না কোনদিন ।।
সবাই সত্যিটুকু জানবে ঠিকই , কবরের এপিটাফে
শুকনো আকাশও বৃষ্টি ঝরাবে ঠিকই , খুদিত পাষাণের ফাঁকে ।।
ভাল থাকবে সবাই , ভালো থাকবে প্রতিবাদ থেকে প্রেমের সমস্ত কবিতা
হারিয়ে যাবে তিনটি কথা আমাদের – তুমি , আমি আর নিরঞ্জনা ।।


ভালোবাসি সিরিজ

0।।
একদিন অপেক্ষায় বসে থাকবে
চোখ দুটি একই ভাবে ,
একদিন পরবে মনে হৃদয় দিয়ে
একই ভাবে ,
খুঁজবে দুটি হাত একই ভাবে
চোখের কষ্টের জলে ,
অনুভূত হবে অদৃশ্যতা ঘুমের আড়ালে ।।
সেই দিন আসবে যেদিন পরবে মনে
আজকের সব ,
মন কেমনের সেই রাতের ব্যাকুলতায়
দেখছে চোখ স্বপ্ন হয়ে ,
বাস্তবতা তবু কেন যে আলাদা কে জানে !!




এবার আর বলবোটাই বা কি করে ?

আমি তোমায় ভালোবাসি ।।
পাগল করেছো তুমি
তাই রোজ , তোমায় আমার কাছে
খুঁজছি আর খুঁজেই যাচ্ছি ।।
তুমি বোঝো কি না , জানি না ,
তবু আর বসে আমি থাকব না ।।
শুধু একবার বলছি ,
ভালোবাসি , সাহস থাকলে
হাতটা ধরেই দেখো ।।

ভাবছো , এই ছিলো এর মনে
ব্যাটা , এই করতে এসেছিলো আমার জীবনে !!
কি করব বলো !! ইচ্ছে ছিলো এমন একজন
যার সাথে শক্তহাতে জীবন করা যায় পার ।।
তোমার কথা মত ঝোলা খানি রেখে গেলাম ,
মন চাইলে আমায় কাছে ডেকে নিও ,
তারপর সঙ্গী হয়ে নতুন এক পৃথিবীর খোঁজে
বেরিয়ে পরবো দুজনে ,
পাগল হয়ে উড়ে বেড়াবো আকাশে বাতাসে ।।

তবে , সময় খুব কম , তাই চটজলদি জানিও ।।
আর না হলে মাথা ঠান্ডা রেখে
আমায় চলে যেতে দিও ।।

এসব অতীত ।।
তাই , এবার আর বলবোটাই বা কি করে ?




তুমি বলছো , তুমি পাগল
কিন্তু কার জন্য জানতে পারি ?
তুমি বলছো , তুমি অসভ্য
কিন্তু সভ্য কাদের বলতে পারি ?
তুমি বলছো , আমরা পরিচয়হীন দুটি শরীর
তুমি বলছো ,  চিনতে নাকি তোমায়
এখনও অনেক বাকি ।।
আচ্ছা আর একটু বলবে আমায় ,
এক পলকের দেখায় কি সব ঠিক হয়ে যায় ?
শরীরের ভাষা কি ঠকিয়ে যায় না কোনদিন !
তুমিই তো বলতে , সময়ের সাথে সাথে আমরা
চিনে নিই একে অপরকে , ধীরে ধীরে
সারাটা জীবন ধরে ।।
তুমিই তো বলতে , এত দুঃসাহসের পরেও
আমায় ভুলতে পারবে না কোনদিন ।।
সত্যি তুমি ব্যতিক্রমী , আর তাই তো
মনের হাজার ইচ্ছা চেপে রেখে দিতে পারো ,
নিমেষে পারি দিতে পারো , দেশান্তরের পথে ।।
সত্যি তুমি ব্যতিক্রমী , আর তাই তো
ভুলতে গিয়েও ভোলা গেল না তোমাকে ।।
ভীত এ মনও আটকাতে পারি নি তাই তো ,
তোমায় বলতে মনের কথাগুলো ।।
সত্যিই তুমি সুন্দরী , সত্যি স্বার্থক এই সৌন্দর্য
নাম থেকে গুনে ।।
আফসোস একটাই , এ সৌন্দর্যের সাথী হয়ে
চলা হল না এ জীবনে ।।
সকালের চাতক পাখি মনে পড়ে ?
সেই আশা নিয়ে দরজার বাইরে বসে আছি ,
মনের দরজা খুলে দেখো একবার
সময়কে সাথে নিয়ে ঝোলা কাঁধে আজও
অপেক্ষা করছি ।।
সত্যি তুমি ব্যতিক্রমী , আর তাই তো
এ সব বুঝেও সরিয়ে রেখেছো নিজেকে ,
নিজের মনের ইচছা থেকে ।।

তুমি বলছো , তুমি পাগল
কিন্তু কার জন্য জানতে পারি ?


 ৩

মরণের স্বাদ চেখে দেখেছি ,
প্রতিদিন , প্রতিরাতে
না জাগা ব্যস্ত শরীরে ,
ঘুম না আসা ক্লান্ত বিছানায় ।।
ছটফট করছে মন ,
শরীর ময় গজিয়ে ওঠা ডানা নিয়ে
উড়ে যাওয়ার শখ প্রচন্ড ,
তোমার মতোই রাতের গোলাকার বলটির সাথে
অন্যের জন্য বাঁচবার খুব ইচ্ছে ,
আর ইচ্ছে প্রতিবার তোমার কোলে মাথা গুঁজে
লক্ষি ছেলের মত শুনবো সব আবদার ।।
তোমার প্রচন্ড বিরক্ত মুহূর্তে
তোমার হাতে হাত রেখে বলবো ,
চলো জীবনের পুরোনো দিনের মতো
অচেনা দুটি মন হয়ে ঝগড়া করি
রাতভোর ।।
আফসোস , সিফারিস করা হয়নি সেদিন ,
আসলে জানতাম না তো ,
তোমার মতো লক্ষি কেউ এই পৃথিবীতে হয় গো ,
জানতাম না , পাগলামিও কখনো এতো
ভালোলেগে যায় ।।
তুমি বলো , বেঁচে গেছি
কিন্তু ; বিশ্বাস করো বাঁচার স্বাদ নেই জীবনে ।।
তোমার সঙ্গে মরণটাও সুখকর এক উল্লাস যখন ,
তখন কে আর চায় বাঁচতে একাকি এ ভুবনে ।।

নীরবতা , আজ অভিশাপ হয়ে এসেছে
দুঃখ নয় , খুশির বন্যায় দু চোখ ভাসিয়ে দাও
এটুকুই আবদার ,
আবার আমায় বাঁচিয়ে দাও ।।

মরণের স্বাদ চেখে দেখেছি ,
এবার আমায় বাঁচিয়ে দাও ।।




একটা প্রশ্ন করবো ,ঠিকঠাক বলবে ;
ভালোবাসা মানে কি ?

এ শুধুই কি কিছু বেদনার চিৎকার ,
হারানোর হাহাকার আর কষ্ট ?
ভালোবাসার ছবি কি ভালো জীবনের চোখে
এতই অস্পষ্ট ??
সম্মানের কি কোন মর্যাদা হয় না এখানে ?
নানা অপমান গায়ে নিয়ে ,বলতে পারবে ,
কেন বিদায় নিতে হবে প্রকৃতদের ?
খারাপ মন নিয়ে চলতে শিখিনি কোনোদিন
ভালোবেসে খারাপ করবো ,
ভুলেও ভাবিনি কোনদিন ।।
তবু যারা শরীর চেনে , বিছানায় জড়িয়ে ধরে
অঙ্গ নিয়ে খেলা করে ;
ইজ্জত নিয়ে মৌজ মস্তি করে ,
তারপর একদিন অপ্রয়োজনীয় বলে
ফেলে দেয় আবর্জনার স্তুপে ।।
তাদের কাছে প্রেম যেন রোজ
সাবলীল ভাবে ধরা দেয় ,
সোঁপে দেয় পুরো শরীর ও মন ।।

তাহলে ভালোবাসা মানে কি শুধুই
পায়ে পায়ে ঘষাঘষি , শরীর নিয়ে রেষারেষি
আর হামি-কিসির এক প্রতিযোগিতা মাত্র ?

তাজ্জব ব্যাপার !!
ভালো হতে শিখেছিলাম ,
বাইরে এলাম তো দেখলাম ,
ভালোবাসার পৃথিবীটাও কালোরই
পোষা গোলাম ।।

একটা প্রশ্ন করবো ,ঠিকঠাক বলবে ;
ভালোবাসা মানে কি ?


 ৫

আজ তুই কাছে নেই ,
স্পষ্ট , সোজা সাপ্টা কথা গুলো
কোথায় হারিয়ে গেল অচিরেই ।।
শুধু পুরোনো কিছু চিহ্ন রয়ে গেছে ,
চোখের জল হয়ে পাতায় পাতায় ভাসে ।।
মনে হয় ঝড়ের মতো জেগে উঠবে
আমার সারা শরীর জুড়ে ধুলো হয়ে
জড়িয়ে ধরবে ।।
কানের কাছে নরম ঠোট দুটো  টেনে
বলে উঠবে , চল না
চল না আবার গল্প করি ।।
চল না দুজনে মিলে টুক করে উড়ে আসি
এভারেস্টের শীতলতা থেকে জঙ্গলের পবিত্রতা ।।
যা হয়েছিল , চল না সব ভুলে
আবার গল্পের পাতায় পাতায় লেখা হয়ে
ভেসে উঠি ।।
অপরিচিত দেয়ালটা ভেঙে , চল না
পরিচয়ের সম্পর্কটা মজবুত করি ।।
তুই কি জানিস , সেদিন রাতে ঘুম হয়নি ,
আসলে বোধহয় তোকে বলা কথাগুলো
নিজের মন মেনে নেয়নি ।।
বড় হয়েছি , কাঁদতে তো পারিনা ,
লোকে কি বলবে !!
তাই এবার ওঠ , জড়িয়ে ধর আমায়
তোর বুকে মুখ গুঁজে শান্তির কান্না কেঁদে নিই
আবার একবার ।।

নিথর , পাথর পরে আছে নীরবে ,
অঝোরে ঝরে পরা তরুণীর করুন অশ্রু ধারা
হয়তো আর কোনোদিন ফিরিয়ে দেবে না
তার হারিয়ে যাওয়া সেই ভালোবাসার গল্পগুলো ।।
সেদিনের চলে যাওয়া সময় কেড়ে নিয়েছিল
ছেলেটির বুক ভরা আশা প্রত্যাশার ঝড় ।।
আর আজ সেই ঝড়ে ভেসে চলেছে
মেয়েটির সমস্ত আক্ষেপ আর অনুশোচনা ।।

সত্যি , বিশ্বাস হয় না
আজ তুই কাছে নেই ,
স্পষ্ট , সোজা সাপ্টা কথা গুলো
কোথায় হারিয়ে গেল অচিরেই ।।




ভালোবাসা
এক শীতের দুপুরে হালকা রোদ্দুর ,
ভালোবাসা
গরম দুপুরে এক শীতল সমুদ্দুর ।।
ভালোবাসা
একটা বন্ধন দায়িত্বের ,
ভালোবাসা
এক লড়াই দুটি জীবনের অস্তিত্বের ।।
ভালোবাসা
একটা ছোট্ট হাঁসি আর চোখের ইশারায় ,
ভালোবাসা
হাতে হাত ধরে হেঁটে চলা সমুদ্র কিনারায় ।।
ভালোবাসা
তোমার জন্যে আমি আর আমার জন্য তুমি ,
ভালোবাসা
বদ্ধ জীবনে এক নতুন বনভূমি ।।
ভালোবাসা
কিছু কথা , কিছু ব্যাথা ,
ভালোবাসা
এক কাহিনি মান , অভিমানে গাঁথা ।।
ভালোবাসা
পরিচয় আমাদের , আগামীর জন্য ,
ভালোবাসা
জীবনের কাহিনী , জীবনকে করে দেয় ধন্য ।।



কত রাত , কত দিন
কাটিয়েছে দুটি চোখ নিদ্রা বিহীন ,
তোমার ফেলে যাওয়া কথা আর ভাষায়
পাগল এ মন আজও তোমায় ভালোবেসে যায় ।।
জানিনা সকাল আর কতদূর ,
আবার কবে উঠবে রোদ্দুর ,
আলোয় ভরে উঠবে আকাশ ,
আনন্দে উঠবে নেচে এ বাতাস ।।
আমি সেদিনের স্বপ্ন দেখি ,
যেদিন তোমার নয়নে ডুববে এ আঁখি ,
আমার সুখে হবে তোমার বাস
আর তোমার দুঃখে আমার সর্বনাশ ।।
কথা দিয়েছি , থাকবো সঙ্গে
সে দূরে হোক বা কাছে ;
সর্বদা ডেকে নিও আমায় , যদি কোনোদিন
প্রয়োজন মনে হয় ।।
লোকে কি বলবে তা তো জানিনা ,
শুধু বুঝি আমার নয় এ কোন ছলনা ;
সেদিনও বলেছি , আবারও বলছি ;
আমি ভালোবাসি শুধুই তোমায় :
পরীক্ষা এখনও প্রার্থনীয় ।।



অভিমান আজ যত গুড়িয়ে গেছে
নতুন এক সকাল , নতুন ভাবে এসে দাড়িয়েছে
আমার বুকের দ্বারে ।।
আমি ভাবিনি কোনোদিন আবার দেখা হবে ,
আমি ভাবতে পারিনি কোনোদিন এভাবে
তোমার ডাক ভেসে আসবে ।।
স্বপ্ন মনে হয়েছিল তখন ,
তোমার দেখা আবার পেলাম যখন ,
সকালের তারা সবে আড়মোড়া ভেঙেছে
ঘুম ভেঙেছে নতুন এক বর্ণময় আকাশের ।।
ফাঁকা সে হাওয়ায় , উড়ে যায় যৌবন
ডানা মেলে দূর থেকে আরও দূরে ,
মিশে যায় তারা , আকাশের নীলিমায় ।।
শুধু তুমি আর আমি ; একলা দুজন
ব্যস্ত বেতারে আদান প্রদান করি
নিজেদের প্রয়োজন ----
আমি কি কোনোদিন ভাবতে পেরেছি ,
এমন দিনও আসবে , ঠিক যেমনটা চেয়েছি ।।
মেঙ্গেছি ভিক্ষা তার প্রতি দ্বারে ,
একটা দিন শুধু ;
যখন মাথা উচিয়ে বলবো সবারে
তুমি আর আমি পরস্পরে
কত ভালোবেসেছি ।।

অভিমান আজ যত গুড়িয়ে গেছে ।।




ভেবেছি , প্রেম করবো না কোনদিন ;
প্রেম , অহেতুক মনে আনে ভয়
হারাবার ভয় , হারিয়ে যাওয়ার ভয় ;
এসব আর আমার ধাতে নাহি সয় ,
ভেবেছি , প্রেম করবো না কোনদিন ।।
পারবো না দিতে যন্ত্রনার সাথ ,
পারবো না ধরতে তোমার অবুঝ ঐ হাত ,
পারবো না চিনিয়ে দিতে নিজেকে রোজ
পারবো না খুঁজে নিতে একটু শান্তির খোঁজ ।।
তুমিই যখন বুঝলে না আমায় ,
তাই ভেবেছি , প্রেম করবো না কোনদিন ।।
তোমার জীবনে অনেক বাঁধা ,
আমার চোখের জলের রঙ সাদা ,
পারবো না রাঙিয়ে দিতে প্রতি ফোঁটা ;
প্রেম যেন আজ আস্ত একটা কাঁটা ,
অন্তরে গেঁথে থেকে যায় চিরকাল ।।
পারবো না সে নীরব যন্ত্রনা বয়ে বেড়াতে বারবার
তাই ভেবেছি , প্রেম করবো না কোনদিন ।।


১০

ক্ষমা করে দে এবার আমায় ;
তোকে আমি খুব জ্বালাই , তাই না রে ?
কি করবো বল , তুই যে আমার সুখ
আমার শান্তির আশ্রয় স্থল ।।
দূরে যেতে চাই রোজ , পারি না
ভুলে যেতে চাই রোজ , পারি না
রাত জাগা চোখ পাগলের মত তাকিয়ে থাকে ,
আর দিনের কলম আমার সাদা পাতায়
তোর ছবি আঁকে ।।
ক্ষমা করে দে এবার আমায় ;
তোকে আমি খুব জ্বালাই , তাই না রে ?
ঘড়ির কাঁটা দুটো দেওয়ালের আড়ালে দিচ্ছে ফাঁকি
মনে হয় বারোটা বাজতে আর একটু বাকি ,
তারপর সব স্বপ্ন সত্যি হবে ,
তুলসীর গন্ধ দু চোখে ঘুম পাড়াবে ,
ধুপের উড়ে যাওয়া ধোঁয়ায় মিশে যাবো আমি
আর বাসি শরীরখানা ছাই হয়ে পড়ে থাকবে তলানি ।।
তোর জীবন কিন্তু তোরই থাকবে ,
শুধু বায়ু হয়ে প্রতিবার তোর রক্তে মিশে যাবো
ভালোবাসি বলে হৃদয়ের দরজায় চিৎকার করবো ,
এভাবেই একদিন খুঁজে নেবো
তোর জীবন , আমার মরণে ;
এভাবেই একদিন ঝরে পড়বো
বৃষ্টি হয়ে , রোজ রাতের দুচোখের শ্রাবনে ।।
ক্ষমা করে দে , এবার আমায় ;
তোকে আমি খুব জ্বালাই , তাই না রে ?



১১

ভুল করে ফেলেছি একটা । খুব মস্ত ,
স্বীকার করছি ; অন্যায় হয়ে গেছে আমার
তোমাকে ভালোলাগার আগে
একবার মনে হয় নি প্রয়োজন তোমাকে জানাবার ।
সব কিছু ছেড়ে , তোমাকে আপন করেছি
জীবনে আমার এক সাথী বলে জেনেছি ।
এ টুকুও নয় , কত বড় স্পর্ধা আমার ,
আগ্রহ দেখাই কি না তোমাকে জানার !
এ জীবনসঙ্গী রূপে তোমাকে পাওয়ার !
এ কি কম বড় অপরাধ বলো , স্বীকার করছি ।
পারি নি , নিজেকে আটকাতে এবার
তার জন্যেই তো ; চাইছি মতামত তোমার ।
আমি মুখ্য সুখ্য এক সাধারন গোবেচারা
তোমার টানে ছুটে চলা এক পাগলধারা ,
যদিও পারবো না আনতে চাঁদ ; তোমার পৃথিবীতে
পারবো না এনে দিতে এক কণা সূর্যের উত্তাপ ;
এ প্রচন্ড শীতে ।
তবু তোমাকেই চাই ,
আমার চোখে আর কোনো বিকল্প যে নাই ।
দুস্পর্ধা দেখিয়ে বলছি , আমি তোমাকে ভালোবাসি
চিরকাল দেখতে চাই , তোমার মুখভরা হাঁসি ,
অপরাধ করে ফেলেছি এটাই , স্বীকার করছি ।
যদি নিজের বলে মনে করো ,
কাছে টেনে নিয়ে যত খুশি শাস্তি দিও
তোমার জন্য আমি সবসময় হাজির আছি ।
সত্যি , ভুল করে ফেলেছি একটা , স্বীকার করছি ।।


১২

স্বীকার করেই গেলাম এতো করে
তবু এলে না তো একটিবার বাঁধন ছিড়ে ।
তুমি কি বোঝো নি গো
আমি তোমাকেই বলে গেছি মনের কথা
তুমি কি শোনো নি এতবার
স্বীকার করেছি নিজের জমানো ব্যাথা ।
কতবার তো ডেকেছি , কথা তো বললে না
কতকথা তো লিখেছি , উত্তর তো লিখলে না ।
আমি তোমাকেই সপেছি পরান
তোমারই জন্য লিখে চলেছি অনর্গল এ গান
সত্যি বলছি , স্বীকার করছি ।
লোকে বলে , তুমি যেন বাড়ির গিন্নি
আমার কাছে কিন্তু তুমি প্রসাদের সিন্নি
প্রাপ্তি মনের ভক্তির মধ্যে দিয়ে ।
স্বীকার করছি গো , এ লুকোচুরি খেলা বন্ধ কর
সামনে এসো , ভালোবেসে জড়িয়ে ধরো ।
অপরাধ নেবে না , ঐ অচেনা বেসে ভালোলাগেনা
ঠিক মন ভরে না জানো ।
স্বীকার করছি আবার , যতবার বলবে ততবার
বলতে পারি , আমি তোমাকে ভালোবাসি
দেখতে চাই তোমার মুখে হাঁসি ।
আর এ ধৃষ্টতা আমার ; স্বীকার করছি
শাস্তি মঞ্জুর হোক ।

প্রেম-পত্র সিরিজ

প্রেম - পত্র  ১

এমন কিছু মন আজও আছে এ পৃথিবীতে ,
সহজ , নম্র , সরলতায় ঠাসা
অসংখ্য কথা মনে পুষে রেখেও বলে যায়
না বলা অনেক কটা মনেরই ভাষা ।।
আমি দেখেছি তাকে প্রতিদিন
এই পথের ধারে , কাঁচের ওই দেওয়ালের ওপারে
চিনেছি তাকে কাছে গিয়ে ; অপেক্ষায় বসে
এক সুন্দর প্রভাতের আলোর ।।
চোখ দুটো তার : যেন অসীম স্বপ্ন বয়ে বেড়ায়
প্রতিদিন , প্রতিবার -- কাব্যিক ছন্দে গড়ে ওঠা
সে মনীষী আমার চোখে , অন্ধকারের পথে এক নতুন আলো : যেন ডাকছে আমায় ।।
সাহস হলনা ঠিক , যদি তাড়িয়ে দেয় ;
বিস্বাস টুকু বেশ নেমে গেছে মাটিতে --
তাই ফিরে এলাম নিজের ঠিকানায় উদাস ভাবে ।।
তবে দেবী অপেক্ষা কর , একদিন ফিরে আসব ঠিক
বলব সমস্ত গল্প তোমায় ; কিভাবে একটু একটু করে
আবার প্রেমে পড়লাম তোমার ।।





প্রেম - পত্র ২

বয়ে যাওয়া একটা ঝড়ের মত
আমার চোখে ধরা দিয়েছ তুমি ,
শূন্যতার এক অদ্ভুত খেলায়
মেঘ হয়েই বর্ষে গেছ ভালবাসার চিঠিখানি ।।
তোমায় সামনাসামনি দেখি নি কোনদিন
হয়ত সুযোগ হয় নি দেখা করবার --
তবু একটিবার তোমায় সামনাসামনি দেখতে চাই
জানতে চাই এক অচেনা পাখি হয়েও
কেন এত বিস্বাস করতে শুরু করেছি তোমায় ।।
কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলতে চাই
ভালবাসি তোমায় , ভালবাসবে তুমি কি আমায় ??
তোমার ছবিটা প্রথম দেখি এই পাতাতেই
ফুটে উঠেছিল আমার এই ঝাপসা চোখের সামনে ,
মনে হয়েছিল আবার একবার তোমার জন্য তো
বাঁচাই যায় ।।
তারপর বহু বার পত্রের আদান প্রদান ঘটে গেছে
তুমি আমায় চিনেছ খানিকটা আর অল্প আমি তোমায়
ভাষার মধ্যে দিয়েই প্রথম দৃষ্টি পড়েছিল
তোমার চাউনির দিকে , যেন রাম সিতার প্রাক স্বয়ম্বর মিলন ।।
নানা হাসি ঠাট্টা ইয়ার্কি আর কবিতার প্রতি
তোমার ভালবাসা আমাকে আরও কাছে ঠেলে দিয়েছে ।।
ডাক হরকরার মত ফেরি করে ফিরেছি এত দিন
নানা সুখ দুঃখ প্রেম যন্ত্রণার কাহিনী ,
তবু অপেক্ষা রয়ে গেছে আজও যখন বসে আছি
এই ভিনদেশে , তোমার থেকে অনেক দূরে ;
অপেক্ষা যেন বন্দিনী সিতার তার ভালবাসার থেকে
একটা চিঠির অপেক্ষা : একটা বার্তার অপেক্ষা ।।
ভেবে দেখতে পার , হতে পারে তোমার মনের অনেক গভীরে
আগ্নেগিরির হৃদয় থেকে ম্যাগমা একই ভাবে বেরিয়ে আসতে চায় : প্রচুর ধাক্কা খেয়ে
আমারই মত সাহস হারিয়ে ফেলেছে ।।


প্রেম-পত্র ৩

একগুচ্ছ জনতার ভিড়ে আমি একলা
অনেকের কথায় বোকা , তাই পারিনি আজও
জীবনের পূর্ণগোলক এঁকে দিতে ।। হয়ত ওরা কিছুটা ঠিকই বলে ,
কিন্তু যেটুকু জানে সেটুকুই বলে , যেটা জানেনা সেটা হল
রাজকন্যার সামনে দাঁড়িয়েও বলতে পারিনি আজও
খাঁটি হৃদয়ের খাঁটি তিনটে কথা ।।
বাড়ির কাছেই বিশাল ঝিল আছে , জলের ধরে কত পাখি
রোজ বসে আড্ডা দেয় , খেলা করে ।। সেদিন নজরে এল
দুইজন দূরে একলা বসে ।। ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে উপভোগ করছে
ভালবাসার মুহূর্ত ।।
এরকম কত তো রয়েছে , চোখ খুলে তাকালেই দেখা যায়
গাছে গাছে , পাতায় পাতায় , জলের স্রোতে , হাওয়ায় হাওয়ায় --
সবাই পেরেছিল বলতে ।। শুধু আমি ছাড়া ।।
সূর্যের অস্তগামী চেহারার পিছনে অন্ধকার নেমে আসছে ,
ঠিক যেন ঝড়ের পূর্বাভাস -- ফিরতি পাখিদের দলে আমরা দুজন ;
চলো না মনের কথা শেষবার বলে ফেলা যাক ।।
তোমার জানি অভাব নেই কোন ,
খুঁজলেই ভাল ছেলে পেয়ে যাবে অনায়াসে :
সমস্যাটা আমার ; বলেই দেখি অন্তত যদি কোন পেত্নিও
জুটে যায় শেষমেস ।।


প্রেম-পত্র ৪

মন থেকে তোমায় ভালবেসে গেছি
খাঁটি সোনার মত আমার চাওয়া
আমি জানি নি আজও তোমায়
জানিনা কোনদিন হবে কি হবে না দেখা ।।
তুমি এক ভিনদেশিনী আমার চোখে
এক তৃপ্তি জোড়া বৃষ্টি ফোঁটা এ বুকে --
ঠিক যেমন করে দ্বিপ্রহরের শেষে
ঘন কালবৈশাখী ঝড় ধেয়ে আসে
শীতল এক বাতাস বেসে ।।
তুমি ঠিক তেমনি নতুন এক ছন্দ হয়ে বিরাজমান
কাব্যের পাতায় পাতায় ।। প্রচন্ড ঠান্ডায় এক গরম
কম্বলের ছোঁয়া হয়ে তুমি ঘুম পাড়িয়ে যাও
ঘন কুয়াসাময় মাঝ দরিয়ায় ।।
এই কদিনের পরিচয় তোমার সাথে
কখনো হাসিতে , কখনো রাগের অগ্নিগ্রাসে ;
কখনো তুমি শান্তি রুপিনী , কোথাও আবার
প্রেমময়ী অমৃত সুধা ।।
তবু অনেক বাকি রয়ে গেছে এখনও
জীবনের পথে চলতে গিয়ে খুঁজে নেব
তোমায় সমস্ত খোঁজা ।।
আর তো কটাদিন মাত্র বাকি , তারপর সব বলে দেব
সেদিন চাইলে কাছে টেনে নিও , নাহলে ঠেলে দিও
বহু দূরে : রাগ করব না সোনা , একটুও রাগ করব না
অপমানটা সয়ে গেছে ।।


প্রেম-পত্র ৫

কত দিন কেটে গেল এভাবে ,
কত রাত কেটে গেল আগামীর স্বপ্নে
তোমার কাছে আরো এগিয়ে এসেছি আমি
দেখেছি , চিনেছি , পেয়েছি তোমায় অবশেষে
আমার মনে মনেই যে ; হিরকের চেয়েও অনেক দামি ।।
আমি জানি ভয় তুমিও পাও , আর
অনেকটা আমিও --
তবু কাটিয়ে দিচ্ছি দিব্বি ; পার করছি
ধাপে ধাপে সিঁড়ির অংশবিশেষ ।।
আমি জানি তুমি আজ আংশিক
আমাকে ছাড়া , আমিও তাই
বিশ্বাস কর , অসহায় বড্ড লাগে নিজেকে
তোমার প্রেমে যে আমি পাগলহারা ।।
অভ্যাসটা আজ খুব বাস্তব
সমস্ত কিছুই একটি বার জানিয়ে রাখা তোমায় ।
যদি কোনভাবে একটুও আমার
ভুল হয়ে যায় , তুমি তো আছো সোনা ।।
পরিশেষে একটা কথা বলে যাই ,
ভয় পেয়ে পথ হারিও না কোনদিন
ফিরব তোমার খুব কাছেই একদিন
অপেক্ষার আর তো কিছু দিন --
দুটো জীবন আজ চলন্ত বাসে বন্দি যেন
ভুল বুঝে আবার যেন অচেনা পথে নেমে যেও না ।।


প্রেম-পত্র  6

আলোর এক সরলরেখায় তুমি এসেছিলে সেদিন
সে সময় , মুহূর্তগুলো সত্যি বলতে ভুলতে পারি নি আজও
আর ভুলতে পারবও না কোনদিন ।।
তখন শীতের ছোঁয়া সেভাবে লাগেনি জীবনে ,
বসন্তের কোকিল ডাকেনি তার কুহু তান ,
রাতের তারারা যখন ঘুমিয়ে গেছে আকাশ চাদর তলে
তখনও সেই একটাই আবদার --
কবিতাগুলো সিরিজ হতে দিও না এবার ।।
বিশ্বাস হয় নি একটিবারও , এভাবেও মনের কথাগুলো
পড়ে ফেলা যায় ; এভাবেও বুঝতে পারা যায় আমাকে ।।
বিশ্বাস হয় নি এভাবে চিঠিগুলো সে রাতেই
কেউ চুরি করবে নিজের মনের ঠিকানাতে ।।
আর তারপর !! শুধুই আদরবাসার দিনরাত্রি কাটানো
আর দিন গোনা নতুন নভেম্বরের প্রতীক্ষায় ।।
কত রাত সেরাতে জেগেছিলাম দুজনে ; মনে পড়ে ?
কত কথা লিখেছিলাম রাত জুড়ে
ফেসবুকের পাতা ভরে দুজনে ; মনে পড়ে ?
না ফুরানো সে দিনগুলো ---
রাত জাগা সে রাতগুলো ---
খুবই গুরুত্বপূর্ণ আজও ---
তোমার কাছে , আমার কাছে ; আমাদের কাছে ।।
আজ উঠি , তবে খেয়াল রেখো
" দা সো মাস্ট গো অন ।। "




নতুন প্রেম পত্র

১।।

আমি এক টুকরো স্বাধীনতা চাই
যেটা খুঁজে দেবে ফেলে আসা সমস্ত মুক্তির উপায়
আমি এক টুকরো স্বাধীনতা চাই
সেই বিকেলের নরম পথ আর হেঁটে চলা শহর দুটি পায়ে
আলতো ছোঁয়া শরীরে আর শরীরময় গরম ছোঁয়ায়
বসন্তের ফুলে সেজে উঠবো , ওই ঝিলে , চল দুজনে
ফিরে আসা দুটো ঠোঁট জুড়ে
হোক না আজ রাত ভোর ; হালকা চুমু তোমায়  ।

আমি এক টুকরো স্বাধীনতা চাই
যার নেশায় গান গাইবে আকাশ
চোখে চোখে হবে ভালোবাসা আর প্রথম দেখা
প্রথমবার ঠোঁটের আলতো কামড়ে
আলতো ছোঁয়া হোক শরীরে আর শরীরময় গরম ছোঁয়ায়
 আমি এক টুকরো স্বাধীনতা চাই ।


নতুন প্রেম পত্র ২।।

নীল আকাশ , নীল মেঘ , নীল সেই রাতের স্কার্ট সালোয়ার
নীল ওই সমুদ্দুর মাখা নীল শরীরে
নীলাভ এক নীল ছবি লেখা
নীল পাতায় গেঁথে রেখে যাওয়া কিছু নীলাময় নীল নির্জনতা ।

সুমনের ভেসে আসা হাল ছেড়ো না-র গভীর তৎপরতা
ব্যাক স্টেজের নীল পর্দার পিছনে দিনভর খুনসুটি আর গান বাঁধা
আর তারপর বাতাসের গুনগুন সুরে লড়াই করে
কে প্রথম কাছে আসার স্বরলিপি ।

নীল আকাশের গায়ে ফেলে আসা নীল চোখ বন্ধ করা
দুটো দীর্ঘ নিশ্বাস , আঙুল চেপে দাঁড়িয়ে থাকা দুজন
আর বসন্তের প্রথম আগমনী ।
ভীষন দুষ্টু মিষ্টি তোমার ঠোঁট দুটো আর আঙুলের খেলা
নীল ওই স্কার্টের গভীর আড়ালে --
চলো না , নীল এই দুপুরে , নীল রং আবার প্রিয় হয়ে উঠুক
তোমার - আমার - আমাদের ।


নতুন প্রেম পত্র ৩।।

স্বপ্নের পাহাড়ের চূড়ায় , চলো বসে লিখে আসি
দুটো কবিতা
একটা তোমার হবে , ভালোবাসা ধরা দেবে শরীরের
ভাঁজে ভাঁজে
আর একটা আমাদের , এক হয়েও নতুন করে তোমায়
পেতে চায়

সমুদ্দুরের ধারে রোদ্দুর , জলের তলায় ফিরে যাবে বলে
তৈরি প্রায়
আর আমি পাহাড়ে বসে আছি , তোমাকে জড়িয়ে নিয়ে
অন্ধকার নেমে আসছে হাঁটি হাঁটি পায়ে পায়

তোমার ক্লান্ত চুল উড়ে এসো ছুঁয়ে গেছে হৃদয়
একটু আগেই
তার রঙ এখনো নামেনি বুক থেকে যখন
তখন স্বপ্নের সেই সিগারা ছেড়ে বাস্তব এসে কাঠঠোকরায়
আমার সমস্ত যন্ত্রণার ডাল ধরে

ভাবছি , আজকের রাত কাটাবো কোন পথে
ঠোঁটের ভেজা কামড়ে নাকি
শরীরের হাজার আঁচড়ে , জড়িয়ে রেখেছে
একটা ভালোবাসায় -- একটা আদিমতায় ।


নতুন প্রেম পত্র ৪।।

একটা অনুরোধ করবো ।
প্রথমবার ভালোবাসা তোমার অধিকার থেকে সরিয়ে
নিয়ে আসছি কবিতার পাতায়
কলম দিয়ে সাজিয়ে রেখেছি জতুগৃহ
আর কালি দিয়ে ঢেকেছি আমার হৃদয়

ভয়ের অন্ধকার আজ পিছনে দাঁড়িয়ে
সময় হয়ে আসছে ওপরে ওঠার
পা কাঁপছে কিন্তু এই প্রথম
আজ তোমাকে আমার পাশে বড্ড দরকার ।
তুমি আসবে গো ?

না থাক । তারচেয়ে একবার পড়তে দাও
সূর্যের আলো নিভে গিয়েও জেগে ওঠে সমুদ্রের ঢেউয়ে
আমি না হয় দশবার হাড়ভেঙে , ক্লান্ত শরীরে ফিরতে শিখবো
এই স্টেজের পাশে আবার

অভিনয় জীবনের মূল । তোমার দয়ায় হাসির অভিনয় বেশ রপ্ত হয়ে গেছে
আমি এখন একটা ফিনিক্স পাখি
আঘাতের রক্ত ফোঁটাতেও হাসির ছলনা দেখিয়ে বেড়াই

তবে , তাতেও যদি হেরে যাই
মৃত্যুর আগে একবার পিছনে ফিরে দেখবো অবশ্যই
তুমি আসবে তো ?
-----
-----
আসবে তো । আসবে ....
গিটার হাতে সুমন হয়ে গান বেঁধো
' হাল ছেড়ো না .....


নতুন প্রেম পত্র ৫।।

একটা ঘরপোড়া পিঁপড়ের সাথে দেখা হল জোছনায়
ক্লান্তিতে ঘেমে চান
পিছনে দল তার , ভিড় করেছে ঘরের খোঁজে
সময় নেই তাই একফোঁটাও

আমি থেমেছিলাম অনেকক্ষন প্রায়
ওদের দিকে তাকিয়ে
ওদেরও মন আছে , মনে নিশ্চই কারো ছবি লুকিয়ে
কত স্বপ্ন আছে কিন্তু লড়াই নিজের জন্য সবার আগে ।

আমি কিছু পাখিদের দেখেছিলাম
দূর থেকে দূরে উড়ে চলেছিল খাবারের খোঁজে
নানা দিকে , নানা পথে ওদের গমন
আর সবটাই সেই নিজেরই জন্য

আমি দেখছিলাম আর ভাবছিলাম
ওদের জন্য কেউ অপেক্ষা করে
একটু সোহাগের জন্য পথ চেয়ে থাকে
তাদেরও মনে হয় ছোট্ট পাখিটি একবার কাছে আসুক
অনেকটা সময় বুকে টেনে নিয়ে বসে থাকুক পাশে ।

ঘড়ির দিকে তাকিয়েছিলাম একদিন
দুটো কাঁটা , ভীষন তাদের ভালোবাসা
কিন্তু সময়ের জন্য , তাদের থেমে থাকার সময় নেই
সময় নেই একটু চুমু অথবা খুনসুটি
কখনো একটু অভিমান , কখনো আদর করে কাছে টেনে নেওয়ার

আমি সব দেখছিলাম আর ভাবছিলাম
সময়ের হিসাবেই আমাদের ভাঙা গড়া , আজ যে আপন
কাল সে পর
তাই ঠিক করেছি , সময়ের খন্ডটুকু ধরে আরও হিংস্র হবো আমরা
ঠিক যেমন একটা বাজ , ছোঁ মেরে নিয়ে যায় সব
সময়ের অনেক আগে ....
আমরাও ভালোবাসবো , আমরাও অমর করবো নিজেদের
সময়কে হারিয়ে

আর তার জন্য চলো মিশে যাক দুটো শরীর
একই ভালোবাসার চিহ্নে ।



ফরাসি বন্দরের মেয়েটার প্রতি
ভাগ 0

গুলটি ,

জানো , কাল আমার বই বেরোবে ।
হিজিবিজি ভরা পাতাগুলো
ওদের মনে ধরেছে ।

জানো , কাল আমি মঞ্চে উঠবো ।
ওই ভিড় ঠেলে ওপরে
ওপর থেকে দেখবো শ্রোতাদের ।

জানো , কাল খুলে যাবে কিছু গোপনীয়তা ।
তাই ভয় হচ্ছে
কে যে কি বিধান ছুড়ে দেয় ।

তুমি আসবে তো ?
ব্যস্ততা দিন দিন গ্রাস করেছে আমায়
তাই বাড়ি গিয়ে বলে আসা হয় নি আর ।

কিছু বললে না তো !
রাগ করেছ
নাকি অভিমান এই মানুষটার ওপরে ?

আমি অপেক্ষা করে যাচ্ছি ।
ধোঁয়াশা কেটে যাবে সব
সব আবার ঠিক হয়ে যাবে ।

হয়তো দিনটা কালই
তোমার ভাষায় ,
বি পজিটিভ ...

ইতি,
তোমার গোলু

১১আগস্ট ২০১৮
দুপুর ২:৩৬

ফরাসি বন্দরের মেয়েটার প্রতি
ভাগ ১

গুলটি ,

টু স্টেটস দেখেছো ?
আমাদের অবস্থা আজ ওই রকম ।
পাশাপাশি বসে আছি , তবু , অসহায় ।

আমার খুব মনে হয় জানো
একজন অভিভাবক যদি বুঝতো ,

আমাদের অবস্থা ।

মেঘের চোখে জল নেই
আকাশ তবু ভিজে যাচ্ছে ।

বাজারে ভিড় করে আছে
কলতলা থেকে বেড়িয়ে আসা

শ্রোতার দল ...

মাছের থলিতে গু ধোয়া পাছার গন্ধ
তবু ফিরে ফিরে আসছি
কলতলা ঘেঁষা এদো গলিতে

চিকেনের লাইনে
ফরাসি বন্দরের মেয়েটা

ওরফে

তুমি ... তার খোঁজে ।

ইতি
গোলু

১১আগস্ট , ২০১৮
বিকেল ৫:৪৫

ফরাসি বন্দরের মেয়েটার প্রতি
ভাগ ২

গুলটি ,

কাল যখন মঞ্চে উঠলাম তখনও
অনেক কিছুই ভেবে যাচ্ছি ।

তারপর

মোড়ক খুলে দিল ওরা ।
সবাই দেখলো বহুরূপীর মুখ ...
মঞ্চে আমি তখনও দাঁড়িয়ে । অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ।

তোমার ...

ঠিক যেমন ভিড় করে পাবলিক
সকাল সকাল
পাবলিক টয়লেটের বাইরে ।
অতীতের সব জমে থাকা
বেড়িয়ে এল

ধিরে ধিরে ....

ইতি
গোলু

১৩ই আগস্ট
দুপুর ২:১৭

ফরাসি বন্দরের মেয়েটার প্রতি
ভাগ ৩

গুলটি ,

কফি হাউসের তিনতলাটা ভিড়ে ভিড় ।
অনেকেই আড্ডা জমিয়েছে সেখানে
দেখে একটাই কথা মাথায় এলো --
ডাল আর ভাত ; চা আর চিনি ;
আয়না আর চিরুনি অবিচ্ছেদ্য যেমন ,
ঠিক তেমনই জোড়ায় জোড়ায় ফুটে থাকা
ফুল ওদের টেবিল জুড়ে ।

কোন রকমে একটা জায়গা পেলাম ,
ট্রেনের সিট দখলেও এমন সমস্যা ছিল না ।
আবার মনে উঁকিও দিচ্ছিল
আমাদের শেষ ছবিটা

কবিতার ভাষা

আঁকতে পারে ...

আর স্মৃতি

চলমান ছবি ....

আজ ওই ছবির কিছুটা মনে পড়ল
আমাদের শেষ ছবিটা
আমার পিঠে কবিতার ভার
আর বুকে ছবিটা

শেষ ছবিটা

কষ্ট আর যন্ত্রণাময় ।

তবু বেড়িয়ে আসতে চায়
দুজনেই ...
কবিতা হোক আর প্রেমের বিরহব্যথা

ঠিক কষা পায়খানা যেমন ...

ইতি
গোলু

১৩ই আগস্ট
রাত ৮:৫০


ফরাসি বন্দরের মেয়েটার প্রতি
ভাগ - ৪

গুলটি ,

আজ হঠাৎ এত রাতে লিখতে বসলাম ।
জানি আমি এখন পর ,
তবু একবার জানবে না কেন ?

ব্যর্থতা ।

জীবনে সবই তো তোমায় বলে এসেছি । কোন দিন আনন্দে
আবার চরম দুখেও তোমাকে পাশে পাওয়ার পর থেকে তোমাকেই ,
শুধু তোমাকেই আঁকড়ে ধরেছি ।

অভ্যাসটা পুরোনো ।

চুপ করে থাকি এখন , তবু কোনকিছুই ভুলিনি । তাই তোমাকে জানাতে লিখতে বসেছি আবার ।

ব্যর্থতা ।

কবিতা আজ আমার নয় । সবার , কিন্তু আমার নয় । আমি তো কোন অন্যায় করিনি
স্বপ্ন দেখেছিলাম শুধু , ভালোবেসে ।
আচ্ছা ! ভালোবাসা , স্বপ্ন দেখা কি খুব অপরাধ ? নাকি আমি সত্যিই কোন কিছুর অযোগ্য । চুপ থেকো না আর । বিগত তিনটে চিঠি , উত্তর মেলে নি একটারও ।
আজ চুপ থেকো না । উত্তর দিও প্লিস , এই পৃথিবী কি আমার যোগ্য নয় ?

 কলম হাতে লিখতে বাধ্য হচ্ছি আজ তোমায়

ব্যর্থ । আমি ষোল আনা ব্যর্থ ।

প্লিস , প্লিস গুলটি উত্তর চাই এইবার । আমারও জানা দরকার কতটা নিঃস্বার্থ হলে সফল হওয়া যায়
আর কতবার মরে মরে ফিরে আসলে ,
ভালোবাসা ধরা দেয় ?

আমি তো বেইমান নই । তবু কেন জীবনে দাম মেলে না আমার ? খেয়াল রাখা অথবা যত্ন করা পৃথিবীতে অভিশাপ ?

প্লিস লিখ এইবার শেষবার, সবটুকু ছিড়ে ফেলার আগে ।

আমার ঠিকানা :
অভাগা @ তোমার ভালোবাসা . কম ।

ইতি
গোলু

২৩সে আগস্ট
রাত ১২:২৩


ফরাসি বন্দরের মেয়েটার প্রতি
ভাগ - ৫

গুলটি ,

আজ সকাল এসেছিল আমার কাছে
কি বললো জানো এসে ! তুমি নাকি খুব আনন্দে আছো
শুনে মনটা আনন্দে ভরে উঠল ।
আসলে তুমি ভালো থেকো রোজ আর সমস্যা যেদিন
জড়িয়ে ধরতে এগিয়ে আসবে , আমাকে জানিও একবার
হাত দুটো কেটে ফেলবো , সমস্যার ।

আমার কথা জানতে কেউ চায় না
তাই সবার মত ঘাড় নেড়ে দিই আজকাল আর
খুব চেনা কেউ হলে , বলি , ভাল আছি
খারাপটা মুখ দিয়ে বেরোয় না ।
তবে এখানে তো কাছের কেউ নেই , দুরেরও নেই
হৃদয়ের আছে
তাই চুপিচুপি বলছি ভাল নেই একদম
আমি ভাল থাকতে ভুলে গেছি ।

সামনে পুজো । ভাবছি এবার আর নেশা করবো না ।
তারচেয়ে অনুমতি দাও তো , অধিকার থাকলেও দেখাবো না
অভিমানে
দূর থেকে তোমার হাসি ঢাকা মুখটা
দেখে দেখে কাটিয়ে দিতে চাই ।

জগদ্ধাত্রী আমায় ডাকবে না কোনদিন
ফরাসি বন্দরের মেয়েটার প্রতি লেখাগুলো
কোনদিন প্রাপ্তিস্বীকার হবে না ।
বিসর্জন ঘাটে তাকিয়ে

ডুবছে ... ডুবছে ...
আসছে বছর আর হবে না
আমার  মনে হয় এটাই শেষ ।

কিগো গুলটি
গোলুর কাছে একদিন আসবে না

শেষদিন ... বিজয়া প্রণাম ।

ইতি
গোলু

২৩সে আগস্ট
বিকেল ৬:৩৭


ফরাসি বন্দরের মেয়েটার প্রতি
ভাগ - ৬

গুলটি ,

প্রভাতফেরির গান মানেই শিউলি কুড়িয়ে আনা
শিউলি মানেই শরতের আনন্দ
 শরৎ মানেই উৎসব
আর উৎসব মানেই তো ভালোবাসা ।
ঠিক বছরের কাঁটা ধরে ফিরে যাওয়া পথে
সেই ফেলে আসা বাসস্টপ আসে
নামতে গিয়েও হয়নি নামা
আর আজ দেখো নেমে যাওয়াটাও দুরহ দুষ্কর ।
আর তারপর হাসি , ঠাট্টা আর আড্ডার মেলায়
উড়ে যাওয়া নিকোটিনের শেষ ধোঁয়ায়
হৃদয় ভেঙে যাওয়ার আগে
কত প্রেম , অবিরাম বকবক আর কথাবলা
মনে আছে তোমার ?
আমি তো আজও সাজিয়ে তুলে রেখেছি সব
যত্ন করে , মাটি থেকে অনেক দূরে
তুমিও কি তাই ...?
না হলে থাক সেটুকু না হয় গোপনে
অমূল্য বলতে আমার ঐটুকুই
আর বাদবাকি সব ....

উহ্য থাক । বাকি ওসব আজ উহ্য থাক ।

ইতি
গোলু

২৯সে আগস্ট
সকাল ৯:১০

ফরাসি বন্দরের মেয়েটার প্রতি
ভাগ ৭

গুলটি ,

সমুদ্রের নীল জলের ভিতরে চেয়ে দেখো
মুক্ত পেলেও পেয়ে যেতে পারো ।
অনন্ত গভীরে যে সম্পদ পড়ে আছে
সে তো সবার নয়
তবু
দুর্ভাগ্য এটাই , যার জন্য আগলে রাখা এত সব
সেই আবর্জনা ভেবে ফেলে দেয় আপনজনের শব
কি ভাঙলো আর কিই বা হারালো হিসাব খাতায় ওঠে না
পদ থাকলেও সব অসম্পূর্ণ
যখন নিজেতে আর  মন লাগে না ।

ভাবে , হয়তো কাল ভালো হবে
কাল সূর্য উঠবে আবার
আবার খুলবে নতুন করে জীবনের পাঠশালা ।

তারপর
পৃথিবী ঘুমিয়ে পড়লো , সূর্য উঠলো না
কারন

সূর্য আজ আমার প্রতিবেশী তারা ।

ইতি
গোলু

৩০সে আগস্ট
রাত ৮:৪৩

ফরাসি বন্দরের মেয়েটার প্রতি
ভাগ ৮

গুলটি ,

শুনেছিলাম কবিতারা অমর , যেমন দেবতা
তাই রোজ সকালে কবিতায় লিখি প্রার্থনা
এই ভেবে যে কবিতাই তোমার আমার
ভাগ্যমাতা ।
শরীর আমার পর্ণমোচি , আয়ুগুলো ঝড়ে প্রতিদিন
বার্থডের ছুরিটা কেক কাটে না ,
কাটা পড়ে এক একটা ভাবনা ।
হয়তো পরের জন্ম আছে , কিন্তু তার জন্য
মরন হতে হবে দুই চেতনার
কিন্তু
মৃত্যু মানেই তো কষ্ট আর তোমাকে কষ্টের দুহাত
ছুঁয়ে যাবে -- অসহ্য ভীষণ ।

তাই কবিতার খাতায় কবিতার বদলে মৃত্যুর আবেদন
চিঠি আসবে একদিন
তারপর , সবার ভিতরে আমিও থাকব
তোমারও ভিতরে ঢুকে যাবো
এই রাস্তা , বাড়ি , পোড়া টায়ার , গোবরের মাছি
অথবা বাসা হীন পিঁপড়ে , ফিরে যাবে

আমিও ফিরবো
তবে ভিতরে ভিতরে তোমাদের সকলের ।

ইতি
গোলু

৩১সে আগস্ট
দুপুর ৩:৪৯

ফরাসি বন্দরের মেয়েটার প্রতি
ভাগ ৯

গুলটি ,

সামনে হলুদ একটা ব্যাগ । ট্রেনে আমি ।
ট্রেনটা দৌড়াচ্ছে । দৌড়াচ্ছি আমি আর
আমার আগে আগে দৌড়াচ্ছে হলুদ ব্যাগ ।

বাইরে আলো এখনো অনেক । কালো হয়নি একফোঁটাও ।
কালো মানেই কয়লা আর কয়লা কালো চুল তোমার
কালো তোমার প্রিয় , তাই রোজ ফিরে আসো
আমার রাত জাগা স্বপ্নে ।
আমার মন জানতে প্রতিদিন
মাঠে মাঠে ঘুরে বেড়ায় , তুমি সূর্যের চোখে চোখ রাখো জানি
তাই হলুদকে নিজের বানাতে চাই ।


সামনে হলুদ একটা ব্যাগ । ঠেসে ঠেসে ভর্তি করেছি
এতদিন ধরে । তবু সব ভরা যায়নি
ভরা হয়নি সেই এলমোনিয়াম ফয়েলে মোড়া খাবার
সেই ঝুলন ঝোলা দুজনের পুতুল , তুমি আর আমি

কালো ব্যাগটার সাথে ঘরেতেই মুলাকাত হবে
আমার ঘর ; আমাদের কি হবে না কোনদিন ?

ইতি
গোলু

৩১সে আগস্ট
বিকেল ৫:৫৮

ফরাসি বন্দরের মেয়েটার প্রতি
ভাগ ১০

গুলটি ,

প্রায় মাস এক পেড়িয়ে গেলে চিঠি লিখতে বসি আবার ।
অনেক দিন অপেক্ষা করেছি , অন্ধকার আজ কেটেছে জানো
শিউলির গন্ধে আমি বছর ফিরে যাই ।
শিশির আর ঝড়ে না হাওয়ায়
আমার দুচোখে তার নতুন ঠিকানা
ভালোবাসা , এখন দেয় না কেউ
সৃষ্টিগুলো তাই মাতৃহারা হয়ে মরতে চায় ।
পুজো আসছে , লক্ষ্মী আর স্বরস্বতীদের ভিড়ে তুমিও রেডি
হ্যান্ডসাম কোন হাতে হাত রাখবে ,
রাত জাগা উল্লাস আর স্ট্যান্ডের ধারে ভেসে চলবে গঙ্গা
তারপর একদিন হাওড়া ব্রিজ অথবা আর্মেনিয়ার ধারে
বিসর্জন হতে আসা দেবীরা খুঁজে পাবে
হাজার সাতাশীর লাশ আর কবিতা
রামধনু মোড়া আকাশে নীল তারারা চোখ মারছে
তোমায়
আর সেপ্টেম্বর ষোলতে যে ছেলেটা জন্ম নিল
তার আয়ু মাত্র এক মাস এক হপ্তা :
কেকের ওপর খেয়াল কোরো ;
ওগুলো চেরি নয় , কাটা পড়া মৃত রক্ত কনা ।

ইতি
গোলু


১লা অক্টোবর
দুপুর ২:৪০


ফরাসি বন্দরের মেয়েটার প্রতি
ভাগ ১১

গুলটি ,

আমার হৃদয়ে অনেক গুলো কবিতা আজ নাচছে
তাদের কেউ কেউ সাদা কাপড়ে ,
           কেউ কেউ কাপড়খোলা , ন্যাংটা ।
কেউ কেউ বুক থেকে স্বাস নালির ভিতরে ঢুকে গেছে
মিশে যেতে, প্রশ্বাসের বায়ু কনায় ।
তারা স্বাধীন , আকাশের পাখিদের মতো
উড়ে যায় কবিতা , সূর্যের বুক চিরে
           আমি সব দেখেছিলাম , ভাবনায়
আর সেদিন থেকেই কি অসহ্য যন্ত্রনা
 পেটের নিচের মাংসে
মনে হচ্ছে কেউ আঘাত করছে ।
মুখ খুলে চিৎকার করতে পারছি না
কবিতা বেড়িয়ে পড়বে ব্যাগ থেকে
সাবধানে ঘুমাতে যাই
       বিছানায় অগোছালো কবিতা
       চাদরের ওপর , বালিশের সাদা কাপড়ে
তাদের মাঝে শুয়ে গেলে , অসহ্য লাগে
রাত গভীর হলে , জ্যোৎস্না কবিতার রাতে
মঞ্চে ছুটে যাই : চাঁদের কবিতা , নক্ষত্রদের কবিতা শুনি
আরও গভীর হলে গর্ভবতী হই
পিছনের দরজা ঠেলে বেরিয়ে এলো কবিতা
কোলে নতুন ভাবনা তার ।

ইতি
গোলু

১লা অক্টোবর
রাত ১১:৩০


ফরাসি বন্দরের মেয়েটার প্রতি
ভাগ ১২

গুলটি ,

....এবং বিসর্জনের বাদ্দি বেজে উঠলো ।
ফরাসি বন্দরের ঘাটের আকাশটা তখন আবির মেখেছে ,
গঙ্গার জল দূর থেকে তাকিয়ে পল্টনের দিকে
ওখানে কত উন্মাদনা আর এখানে
একলা একটা ল্যাম্পপোস্ট
গিলে খাচ্ছে গিলোটিন মনটাকে
চন্দনের ছোঁয়া লাগছে না নগরের শরীরে
অপেক্ষায় কিছু বাতি জলে ভাসছে
একটু পড়ে ডুবে নিভে যাবে সব
আবার ব্যস্ততায় গ্রাসিত হবে আমাদের সমাজ
জল তখনও হাওড়ার দিকে দৌড়াচ্ছে
মিলনের সেই পুরোনো তৃষ্ণা বুকে নিয়ে
ট্রেন ছাড়ছে তোমার ওখানে যখন
তখন এখানে আমার বিসর্জন ....

ইতি
গোলু

২২সে অক্টোবর
সন্ধ্যে ৭:৫০


ফরাসি বন্দরের মেয়েটার প্রতি
ভাগ ১৩

গুলটি ,


খুব অসুস্থ ।

বিছানা আর বালিসকে নিজের প্রেমিকা ভেবে জড়িয়ে ধরছি বারবার । আসলে একটা সময়ের পর সবারই এমন একজনকে দরকার যার সাথে দুটো কথা বলা যায় । বন্ধু শব্দটি যখন শব্দকোষে পড়ে থাকে শুধু , তেমন একটা সময় ভেবে নিন ।

শুয়ে আছি নিজের ঠিকানায় । লোক আসছে , লোক চলে যাচ্ছে । আমি স্থিতিশীল । আসা বা যাওয়ার কেউই আমার জন্য নয় । তবু মুখটা তুলে দেখছি এলো কি না সময় ।

রাতের ঝাঁপ বন্ধ হলো । শব্দটা শুনলে মনে হয় একটা জেলখানার লকআপ । এইবার যন্ত্রণাটা বাড়বে , ছটফট করতে করতে লম্বা ঘুমের পৃথিবীতে হারিয়ে যাবো ।

একটা নরম কোলে মাথা এলিয়ে দিলাম । শরীরে খুব যন্ত্রণা । বামদিক ঘেঁষে আরো বেশি । হাতটা দিয়ে জড়িয়ে ধরে আছি তোমায় । মশা আসছে , গান শোনাচ্ছে । আমি চুপ করে থাকি ।

রাত গভীর হলে জোনাকিরা ছুটে আসে । শরীরটা ১০২ এ ফুটছে । মুখ সমানে ঈশ্বরীকে ডাকছে --- আমার ঈ কে । আজ সারারাত আমার পাশেই ছিল , তবু সারা দেয়নি একবারও ।

শরীরটা হিম হয়ে আসছে । হালকা মনে হল অনেকটা । তবু অসুখটা আসবে জানি । ফিরে আসুক আবার এটা আমিও চাই ।

কারন

অসুস্থ হলে ঈশ্বরী এসে ধরা দেয় আর সেরে গেলেই বালিশ হয়ে মেঘের দেশে হারিয়ে যায় ....

খুব অসুস্থ আজ থেকে আবার । ছুটির এই কদিন আমার সঙ্গেই তাই থাকবে আমার ঈশ্বরী

ওরফে

আমার মেঘ পিয়ন ।

ইতি
গোলু

২৩সে অক্টোবর
সকাল ০৬:২৫


ফরাসি বন্দরের মেয়েটার প্রতি
ভাগ ১৪

গুলটি ,

একাকীত্ব সুর তুলেছে মাতাল পূর্ণিমায়
হালকা হাওয়ায় রূমঝুম শব্দ বাজে
বাঁশ ঝাড়ের ওপারে ।
মাঝে মাঝে ভাবি তোমাকে হয়তো খুঁজে পাবো
একদিন
হয়তো উঁকি দেবে তুমি , আমার এই মেঘময় আকাশে
আড়চোখা সূর্যের মত , কোন ভালোবাসার ইশারায় ।
ফরাসি বন্দরের ঘাটে সন্ধে নেমে আসে
তরুণ তরুণী কপোত কপোতির ভিড়
কথা বলে চুম্বনের চুম্বক ভাষায় ---

আর আমি
অপেক্ষায় বসে নির্জন নৌকায়
গঙ্গার বয়ে যাওয়া লাল হলুদ স্রোতে
আবছা কুয়াশা মেখে দুটো হাতে

সামনের ফাঁকা স্ট্যান্ডে তখনও ভিড়
মেঘেদের আনাগোনা
আমিই শুধু হেঁটে চলেছি একটা মেয়ের জন্য
মেঘ পিয়নের চিঠি বুকে জড়িয়ে ...
ফরাসি বন্দর তখনও বয়ে চলেছে সাথে সাথে
আমারই কলকাতায় ।

ইতি
গোলু

২৩সে অক্টোবর
সকাল ১০:৪০


ফরাসি বন্দরের মেয়েটার প্রতি
ভাগ ১৫

গুলটি ,

সূর্যের হিলিয়াম আজ ফুরিয়ে এসেছে
অনেক কান্নার পর্ব পেরিয়ে এসেছি
বালিশের তুলো ভিজে পেজিয়ে গেছে কতকাল
আমি তোমায় দেখে গেছি তবু
জীবিত চোখে ।
বিদায়ের ঘন্টা বাজলো
একবার , দুবার , তিনবার
সিলভার রঙের নদীর জল আজ বেশ ঘোলা
মাটির ছোয়া পেয়েছি প্রথমবার ।
এর পরে এই ফরাসি বন্দরকে একলা ছেড়ে
চলে যেতে হবে মোহনায়
প্রকৃতির প্রতিটা ভাষায় এই সুরই বেজে যায়
তরঙ্গ আসে , তরঙ্গ বয়ে যায়
থেমে যায় হৃদ স্পন্দন ।
কিন্তু
তোমার পরিচয় ! সে তো আজও অজানা
ভবিষ্যৎ কি জানতে চাইবে না সেটা !
সেদিন কি উত্তর দেবো !
আমার প্রতিজ্ঞা , তোমায় অমর হতে দেখা
আমার লেখায় , আমার কবিতায়
তার কি হবে সেদিন !!

যাওয়ার সময় হল যখন
যখন সন্ধ্যা তারা দক্ষিণপথগামী
তখন অমর হচ্ছে অন্য কোথাও
একটা ভালোবাসার কাহিনী
সৌজন্যে
আমি আর আমার
ঈশ্বরের পবিত্র কলমখানা ।

ইতি
গোলু

২৩সে অক্টোবর
সন্ধ্যে ৭:০০



#উৎসর্গ_সখি_তোমাকে_১

অপেক্ষা রইল তোমার আমার আর ধর্মতলার ওই চার মাথার । অপেক্ষা রইল বৃষ্টি ভেজা হাওড়া ইস্টিশনের । অপেক্ষা রইল শাড়িতে দেখা আমার বাস্তবে দেখা রাজকন্যার । অপেক্ষা রইল দুজনের হাতে হাত ধরে পথ চলার , কথা বলার । অপেক্ষা রইল জেগে থাকা রাতের । অপেক্ষা রইল নন্দনের । অপেক্ষা রইল বিকেলের রোদের আলোর হালকা উষ্ণতা কপালের মাঝখানে । অপেক্ষা রইল গঙ্গার ধারে ঝুকে পড়া কাঁধে কাটানো বিকেলের । অপেক্ষা রইল প্রত্যেক অপেক্ষার ।
ভালোবাসা অমর রাখা আছে , শরতে , শীতে , বসন্তে । অপেক্ষা রইল ভালোবেসে সখী , আমার নামটি লিখবে তোমার মনের মন্দিরে ....
অধিকার এখনো তোমারই আছে । ফাঁকা খামে প্রেমপত্র রেখে গেলাম ।
" মনে করে সখি ..... ধরিয়া রাখিও সোহাগে আদরে আমার মুখরপাখি তোমার প্রাসাদ প্রাঙ্গনে " ।



#উৎসর্গ_সখি_তোমাকে_২

শুনেছি আজকাল ভালোই আছো । অনেক বন্ধু বান্ধবি , নতুন চেহারায় ঘেরা থাকো । রাত জাগে এখন তোমার ক্লান্ত বিছানার গানে আর ভোর হয় ব্যস্ততার কোলাহলে । ধর্মতলা , পার্কস্ট্রিটে এখনও যাতায়াত আছে নিশ্চই । শুধু অধিকারের মুখগুলো বদলে গেছে চারপাশ ।
শুনেছি আজকাল ভালোই আছো । অন্তত কেউ তো আর ডিস্টার্ব করে না বলো । কেউ তো আর জ্বালায় না তোমার ব্যক্তিগত সময়গুলো । কেউ তো আর ডাক দেয় না অহেতুক । কেউ তো আর চায় না এখন ভালো থেকো ।
শুনেছি আজকাল ভালোই আছো । ভালোই আছো সিনেমায় , আড্ডায় , হোটেল অথবা রেস্তোরাঁয় । পৃথিবীটা ছোট হতে হতে বন্দি এখন তোমার মুঠোয় । আর কিছুদিন ব্যাস । তারপর সাজানো বাগানে তোমরাও হবে ব্যস্ত দুজনে । ফুল ফুটবে । সানাই এর সুরে অভিষেক হবে তোমাদের সংসার । আমি সেখানে এক অতিথি মাত্র ।
শুনেছি , কারন এখনো তোমায় শুনি আমি প্রতিদিন । শুনেছি , কারন এখনো কোন আড়াল থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে তোমায় দেখি । সামনে আসি না ভয়ে । ভালোবাসা আজও আছে । জ্বরের রাতে তোমার পাশে আজও উষ্ণতা অনুভব করি । আজও তোমায় মনে করি নিজের । মনে করি তুমি আজও আমার । অন্য কারোর নয় ।




#উৎসর্গ_সখি_তোমাকে_৩

তোমাকে লেখা এই টুকরোগুলো বুকের মাঝখানে আগুনের মতো জ্বলছে । মনে পড়লে যে কথা কথা বলতে পারিনা
তাই জুড়ে জুড়ে এই কবিতাগুলো আমার ।
তুমিও ব্যস্ত এখন আর তাই মনে পড়ে না আমায় ।
আর আমি ? সে নাহয় বলবো খানিক বাদ
তার আগে , কিছু কথা বলছি মন দিয়ে শোন ,
জীবনের যাত্রাপথে সফলতার হাজার হাজার নজির গড়ে যেও । আমি বা যে কেউ তোমার কেউ হতে পারবে না ।
নিজের চেয়ে বড় কেউ হয় না রে গুলটি ,
গলুর কথাটা পারলে ভেবে দেখো ।
দেশের মাঝে , দশের মাঝে যখন জয়জয়কার তোমার
তখন ভেবে দেখো তো আছে কী এর থেকে বড় কোন অহংকার !! নেই তো ।
আর আমার কথা । আমার খবর ।
শুধু প্রতিষ্ঠা আমার লক্ষ ।
ভাঙ্গনের আড়ালে লুকিয়ে থাকে যে মুক্ত
আমাদের ছোট্ট সঙ্গটুকু তেমনই আমার কাছে এখন ।
আমি আজ এই দেশের , এই অভাগা মানুষের
যারা লাঞ্ছিত , উপেক্ষিত ।
কিছুদিন আগেও রাত হলেই বৃষ্টি নামতো
কালো লেন্সের পর্দায়
এখন সারা শরীরে আগুন শুধু
কিছু করে দেখাবার ।




#উৎসর্গ_সখি_তোমাকে_৪

এই পথে কতবার হেঁটেছি
বিশ্বাস করেছি এ পথ ঠকায় না
ডান দিকের মোড়ে যে পুলিশ কাকু তিনিও চিনে গেছিলেন বলতেন সাবধানে যাও । আগলে রেখো ।
এখন ওলার ঝাঁ চকচকে গদি ,
ভেতরে শুধুই গানের দিন আর গানের রাত
পথে এখন অনেক গর্ত
তবু পথ চলতে হোঁচট খাওয়ার সুযোগ নেই ।
একা একা চলতে শিখে নিয়েছ তুমিও
পায়ে হাঁটা ; সাথে কথা আর বাদামের শব্দ এখন অতীত
তোমার আমার পকেট ভরা দাম
আজকাল যাতায়াতে সাবধান হতে হয়না আর ;
তবে আগলে আগলে-ও আর নিয়ে যায় না কেউ ।



#উৎসর্গ_সখি_তোমাকে_৫

জানি একদিন দেখা হবে ,চোখে চোখেই না বলা কথাগুলো
কাব্যের পাতা হয়ে ফুটে উঠবে ,
আমার কাছে তুই , আর তোর কাছে আমি ; এক গোটা পৃথিবী
সব সুস্থ স্বাভাবিক ; শুধু দুজন পাগল আমরা সকলের চেয়ে দামি ।।
আমার গলায় তোর হাত দুটো জড়িয়ে ধরবে ,চোখের জল
হারানো কিছুর প্রাপ্তির আনন্দে বাঁধ ভাঙবে দুদিকেই ,
ভিজে যাবে শরীর , তবু এ সুখের কি শেষ হয় কোনোদিন ??
ভালোবাসি , তোকে ভীষণ ভালোবাসি বলে উঠবো ;
প্রথমে তুই আর তারপর আমি ।।
তাহলে বলিস নি কেন , হতভাগী ;
চেয়েছিলাম , তবু পারিনি একটিবার ,তুই যদি খারাপ ভাবিস ।।
কিন্তু তুই তো পারতিস ?
চেয়েছিলাম খুব , তবে এখানেও ভয় রাগ করে যদি তুই কোথাও
হারিয়ে যেতিস ।।
স্বপ্ন , এসব স্বপ্ন , আমি রোজ দেখি আর স্বপ্নেই ভবিষ্যতের কত ছবি আঁকি ।।
তুই বিশ্রাম কর বরং , বিশ্বাস কর স্বপ্নই একদিন গড়ে তুলবে
স্বপ্ন পূরণের পথে , এক পথের গঠন ।।
শুধু ভেঙে পড়িস না , তোর ভেঙে পরা মুখ আমার একটুও
ভালো লাগে না ।।
বিশ্বাস কর , একদিন দেখা হবেই ।।




#উৎসর্গ_সখি_তোমাকে_৬

একদিন ঠিক দেখা হবে আবার, ওই বড় মাঠটার ধারে ।। কাজের শেষে সুজ্জি তখন দেখব ফিরছে নিজের ঘরে ।।
সেই আলো আঁধারি গোধূলি বেলায় তখন শুধুই আমার চোখে তোমার ছবি,তোমার মুখে আমার কথা,হাজার কবিতা আর গানের কলি ।।
এদিকে আলো নিভে আসছে , অন্যদিকে কৃত্তিম বাতিস্তম্ভের ওপর ঝুঁকে পড়া এক একটা গোল , জ্বলজ্বল করা চোখ ; আমাদের দিকে তাকিয়ে সমানে ,
যেন আমরা দুই অপরাধী আর ওরা সবাই ঘিরে আমাদের ব্যস্ত নজরদারিতে ।।
তোমার কুর্তির রঙটা ওদের রঙে ভিজে যাচ্ছে , চোখ চারটে হা করে গিলছে পরস্পরকে ; জোড়ায় জোড়ায় ।।
নাক দুটো দুলছে , যেমন পাতা দোলে সকালের হাওয়ায় ।। ঠোঁটের ওপর ঠোঁট জুড়ে গেছে আজ , যেন কোন আঠা লাগিয়েছিল কেউ ওদের সারা শরীর জুড়ে , লাল জিভের লালা পাচার হচ্ছে এ মুখ থেকে ওই মুখের ভিতরে , হাতের অস্থিরতায় লজ্জায় লাল তোমার দুটো গাল আর গোটা অস্থির শরীর ।। ওপরের বাঁধন ঢিলে হয়ে এল , তবু সব সয়ে যাচ্ছে এক অন্য অভিজ্ঞতার উত্তাপে ।।
এমন এক বিকেল আসবে আবার , যখন তোমার গোটা শরীর ও মন শুধুই আমার হবে , আর আমি চুপটি করে তোমার জীবনে বসে থাকব , একটি ভালবাসার গান হয়ে ।।
ভালবাসি , তাই তো স্বপ্ন দেখি তোমার , রোজ রাতে ।। নিজের করে আনব তোমায় এই ঘরের দালানে , কোন এক প্রভাতে ।। তুমিও কি তাই ভাব ? আমার সাথে কি একটা জীবন হাঁটতে চাও ? ভালবাসতে চাও ? শুধু একটা শরীর হয়ে মিশে যেতে চাও , লোমের শিরায় শিরায় ?
তাহলে , একদিন ঠিক দেখা হবে আবার ।। এমন এক বিকেল ঠিক আসবে আবার ।। গভীর ঘুমের সেই রাতের স্বপ্ন সত্যি হবে ঠিক , অপেক্ষা এখন শুধু সেই প্রভাতের ।।




#উৎসর্গ_সখি_তোমাকে_৭

বড় ইচ্ছে হয় ভিজে রাজপথে হাঁটতে
বড় ইচ্ছে হয় চেনা তিনটে কথা আবার বলতে ,
তুমি সেই প্রচন্ড মেজাজে , আমি শান্ত রূপে
টেনে নিতে বুকের মাঝে ।।
অতীত নয় এটাই বাস্তব , এটাই জীবনের পাওনা
কোন সময়ে কে হাজির হবে , এটাও বোঝা যায়না ,
হয়তো যেটা এখন গল্প বলে পাতা উল্টোচ্ছি
একদিন সেটাই জীবনী হবে আবার ।।
দূরে থেকেও তো কাছে আসা যায়
মানো তো না কী ,
ভাগ্যও বদলায় এখানে , সময় তো কোন দূর ছাই
বিশ্বাস রাখো , ইতিহাসের চাকা আবার ঘুরবে ।।


#উৎসর্গ_সখি_তোমাকে_৮

যেদিন প্রথম পুরুলিয়া এসেছিলাম সেদিন বড্ড জ্বর । আশ্রয় পেয়েছিলাম একটা হোটেলের কামড়ায় । নতুন জায়গা নতুন করে চিনতে শেখা ; একদিন ক্যামন করে পুরাতন হয়ে যায় ।
তারপর দিন পার হতে লাগলো । তারই নরম আঁচলের ছায়ায় পরিচয় হল প্রকৃতির সাথে । মেলামেশার মধ্যেই ডুব দিয়েছিলাম শিতল সমুদ্রে । বড্ড আপন করে নিয়েছিলাম তাকেই ; যাকে ছেড়ে জীবন একদিন পাড়ি দেবে নতুন ঠিকানায় ।
আমি তার রূপ দেখেছি রোজ । অপূর্ব সে সুন্দরি আমার মনের মণিকোঠায় এঁকেছিল নিজের সমস্ত স্বপ্ন । তারপর ফণী এলো ; মনের ভাঙা জানালা ভেঙ্গে উড়িয়ে নিয়ে গেলো মনপাখিটাকে --- হয়তো ওই দূর অযোধ্যায় অথবা ঘন কোন সুন্দরবনে ।
অনেক খুজেছিলাম জানেন --- পাখিটি এখন হয়তো নিজের পৃথিবীতে নতুন কোন ঠিকানায় জ্যোৎস্না আলোয় নতুন কোন মনে বসবাস করে । তিন বছর পরে যেদিন পুরুলিয়া ছেড়ে চলে যাবো সেদিন মনে পড়বে ।
মনে তারাই থাকে যারা সব ভেঙ্গে উড়ে যায় ; আর ফিরে আসে না ।


#উৎসর্গ_সখি_তোমাকে_৯

কবি প্রেমে পড়েছেন , এটা স্বাভাবিক
কিন্তু
কবি প্রেম থেকে উঠে এসেছেন , এটা বড়ই অস্বাভাবিক ।
কবি যখন প্রেমে পড়েন , হোয়াইট হাউস সেদিন নিস্তব্ধ
তারপর
আমেরিকার রাষ্ট্রপতির সীমাবন্ধের ঘোষণা পেতেই
কবি প্রেম থেকে উঠে এলেন ,
মানা গেল না তো ?
কবি যখন প্রেমে পড়লেন , নোবেল সেদিন পুরস্কার দেয়নি
তারপর
ঘোষণা হল সাহিত্য শান্তিনিকেতন বানাবে
আর কবি প্রেম থেকে উঠে এলেন ,
বিশ্বাস হল না তো ?
কবি প্রেমে পড়লে , পার্লামেন্ট মুলতুবি হয়ে গেল
তারপর
ইমার্জেন্সি লাগাতেই , কবি প্রেমে ইতি টানলেন
এটাও বাস্তবে ঠিক মানানসই হল না তো ?
কবি যখন প্রেমে পড়লেন , তখন ঘরের কচি ছেলেগুলো বউ আনতে ব্যস্ত
তারপর
বউয়ের জায়গায় একজোড়া বর ঘরে ঢুকতেই
কবি বললেন , প্রেমে আর কোনদিন পড়া যাবে না ,
হজম হল না তো ?
আসলে , কবিরা প্রেমে পড়েন না কোনদিন
মুহুর্মুহু মন বদল হলেও ,
প্রেম তাদের তুলে ধরে ,
তারা প্রেম করে আর উঠে আসে শিখরে প্রত্যেকবার ।


#উৎসর্গ_সখি_তোমাকে_১০

ময় তমকু ভাল পায়
অচেনা পাখির ডাকের মত অচেনা এই শব্দটার রস আজ হৃদয়ে লেগে গেছে । হাজার বার বলতে গিয়েও বলতে পারিনি , মুখে এসেও ওই শব্দ বন্ধন কন্ঠ দ্বার রুদ্ধ করে দাঁড়িয়ে গেছে । এই নতুন প্রভাতে সকালের ফেলে আসা প্রতিটি অতীতেও ওর আকার আমি দেখেছি । ভেবে গেছি শুধু জ্বলে ওঠা বুকের পাঁজরের মধ্যে দিয়ে । চাপা অম্বলের মত যন্ত্রনায় ছটফট করছি ।
তবু বলে দিতে পারিনি
ময় তমকু ভাল পায়
কারন , একটা অচেনা ভয় ।
এরপর সূর্যের আয়ু ঘন্টা চারেক বাড়ল ।
হাজার কাজের মধ্যে মুঠোফোনে কান দিয়েছিলাম বার ছয়েক , ভেবেছিলাম শব্দ দেবো , ভাষা দেবো
হাত দিয়েছিলাম নম্বরে , কিন্তু মন দিতে পারিনি
বলতে পারিনি কথা তোমার ভাষায় ভাষা মিলিয়ে
ছটফট করেছি , বমি হবো হবো করেও গিলে নিয়েছি কতবার । নির্ভীক মানুষ হয়ে মেরুদণ্ড সোজা করে চোখে চোখ রেখেও পলক ফেলে দিয়েছি ।
তবু বলে দিতে পারিনি
ময় তমকু ভাল পায়
কারন , একটা অচেনা ভয় ।
তারপর গোধূলি লজ্জায় লাল হয়ে কে যেন সামনে এসে দাড়ালো আমার । আমি সেই চলে যাওয়া আলোতে দুচোখ দেখেছিলাম তোমার । ভেবেছিলাম রাত নামার আগেই বলে ফেলবো । তাতে তুমি যা খুশি ভেবে নিতে পারো আমাকে নিয়ে ।
কিন্তু বলে দিতে পারিনি
ময় তমকু ভাল পায়
কারন , একটা অচেনা ভয় ।
তাই , রাত কাটিয়ে ওঠার আগে অন্ধকারের কালিমা নিজের কলমে লাগিয়ে নিলাম । এখন এই চিঠি উড়ে যাক , বয়ে নিয়ে বেড়াক একটা অতৃপ্ত কথা আমার মনের ।
সূর্য ওঠার আগেই লিখে গেলাম
উত্তরটা সূর্যের আলোতে ছড়িয়ে দিও ---
ময় তমকু ভাল পায় ।

Comments

Popular posts from this blog

বাউড়ি

চন্দননগরের মেয়েটা