ভারত , নারী , সমাজ এবং .....
ভারতীয় ইতিহাস বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন ইতিহাসের মধ্যে অন্যতম । সিন্ধু সভ্যতার হাত ধরে যে ইতিহাসের ধারা প্রবাহিত হতে শুরু করেছিল তা আজও অক্ষত । তবে সময়ের সাথে সাথে ভারতীয় সমাজে পুরুষতন্ত্রের যে প্রাধান্য দেখা গেছে তা ভারতের ইতিহাস থেকে অনেকটাই ভিন্ন । যে দেশ লক্ষ্মী , সরস্বতী , দুর্গা , কালি , দশমহাবিদ্যার উপাসনা করে থাকে , সেই দেশেই আজ কন্যারা সর্বাধিক বিপদে । রাস্তার অন্ধকারে ধর্ষণ আজ প্রতি দিনের ঘটনা । কন্যা ভ্রূণ হত্যার ফলে লিঙ্গ অনুপাত হ্রাস পেয়েছে এই সমাজে । অথচ এই দেশের গৌরবান্বিত ইতিহাস পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে , নারীদের স্থান এই সমাজে কত উন্নত ছিল ।
আজ এই ইতিহাসের দিকেই আপনাদের দৃষ্টি ফেলতেই আমার এই প্রচেষ্টা :-
আর্য সমাজ :- আর্যদের যুগে মহিলাদের দেবী হিসাবে স্থান দেওয়া হয় । গার্গী , মৈত্রী , লোপামুদ্রা , খনার নাম আজ জগৎ খ্যাত । পুরুষদের পাশাপাশি এই সমস্ত নারীরাও ভারতের ইতিহাসে যে অবদান রেখে গেছে তা সত্যই প্রশংসনীয় ।
“Nijabhujadanda nipatitakhanda
Vipatitamunda bhataadhipate
Jaya Jaya he Mahisasuramardini ramya
Kapardini shailasute " .....
মা দুর্গার ওপর রচিত এই শ্লোকে তার বীরত্ব আমরা দেখতে পাই যেখানে তিনি একাই শত শত যোদ্ধাকে নাশ করছেন । নারীদের দক্ষতার এরকম হাজার হাজার লক্ষ্য করা গেছে সে যুগের লেখাতে । বাস্তবেও নারীদের হাতেই তাই সমস্ত ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয়েছিল তখন ।
দুর্গা বা কালি ছেড়ে এবার রামায়ন ও মহাভারতে ফিরে আসা যাক । সেখানে আমরা বেশ কিছু নারী চরিত্র দেখতে পাই যাদের বাদ দিয়ে মহাকাব্য দুটি কল্পনাও করা যায় না । তাদের বীরত্ব পাঠকের চোখে এক অন্য সম্মানীয় স্থান দখল করে রেখেছে ।
লঙ্কিনী ও শৃখন্ডি চরিত্র দুটির কথা মনে পড়ে । যদিও দুজনেই ছিল পার্শ্ব চরিত্র তবু তাদের যুদ্ধ নিপুনতা বিষয়ে সকলের মনে বাহবা ছাড়া আর কোন শব্দ আসতে পারে না । কন্নড় ভাষায় রচিত জামিনী ভারতম গ্রন্থে অর্জুনকে এক অচেনা দেশে আবির্ভূত হতে দেখতে পাই আমরা । সে দেশ অনেকটা গ্রিক আমাজনের মত , যেখানে প্রতিটি মহিলার মধ্যেই এক যুদ্ধং দেহি মনোভাব । কাহিনী অনুসারে এখানের রাজকুমারী প্রমীলা , অর্জুনের অশ্বমেধের ঘোড়াটিকে বন্দি করে রেখেছিল এবং তারই জন্য অর্জুন সেই দেশে উপস্থিত হন । পরবর্তীতে অর্জুন প্রমিলাকে বিবাহ করতেও বাধ্য হন । ভেবে দেখুন , অনুভব করুন এই দেশের লাজুক নারীদের সাহসিকতা । এই দেশ ও সেখানকার নারীদের সাহসিকতার বর্ণনা আমরা গুরু মৎসেন্দ্রনাথ এবং গোরক্ষনাথের গল্পেও পেয়ে থাকি ।
সুতরাং , একটা কথা পরিষ্কার যে আর্য সভ্যতা ও প্রাক আর্য সভ্যতায় নারীদের সফলতা এবং সমাজে তাদের উন্নতির ছবি আমরা রন্দ্রে রন্দ্রে অনুভব করতেই পারি । আর এটা শুধু আর্য কাহিনীতেই নয় , ইতিহাসের প্রতি অধ্যায়ের মধ্যেই এই বীরত্ব আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে দেখতে পাই । বর্তমান সমাজ হয়তো নিজ দেশের সেই গৌরবান্বিত নারী ইতিহাস ভুলে গেছে ।
মৌর্য সাম্রাজ্য ও তার পরবর্তী ইতিহাস :- মৌর্য সাম্রাজ্যে মহিলা দেহরক্ষী রাখা হতো , সেকথা ইতিহাস পর্যালোচনা করলেই জানা যায় । সেই সমস্ত মহিলারা সুসাস্থ সম্পন্ন , কর্মঠ , নির্ভীক এবং যুদ্ধ বিদ্যায় পারদর্শী ছিল । শুধু তাই নয় , সে যুগে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের বেশি বিশ্বস্ত বলেও মনে করা হত আর তাই মহারাজ মহিলাদেরই এই বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে থাকতেন । যুদ্ধ ক্ষেত্রে মহিলারা সেবা ধর্ম যেমন নিপুণ কৌশলে সামলাতেন , ঠিক তেমনই প্রয়োজনে সরাসরি মাঠে নেমে যুদ্ধ করে থাকতেন আর এ জন্য তাদের ছোট বেলা থেকেই যুদ্ধ কৌশল শেখানো হতো ।
মধ্য যুগ থেকে সমাজ ব্যবস্থা ধীরে ধীরে পিতৃ তান্ত্রিক আকার ধারন করলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মহিলাদের সুযোগ কমে যেতে থাকে । তবে এসবের মধ্যেও যোগ্যতা নিজের পথ সব সময় তৈরি করে নিয়েছিল । একাদশ শতাব্দীতে ওয়ারঙ্গেলের মহারানী রুদ্রমা দেবী ছিলেন একজন শক্তিশালী যোদ্ধা । তিনি একটি শক্তিশালী সৈন্যদল নির্মাণ করেন এবং প্রতিটি সৈন্যকে মার্শাল আর্ট এর শিক্ষা প্রদান করেন । এর ফলে তার সাম্রাজ্য দেশের মধ্যে একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্য হিসাবে পরিচয় লাভ করেছিল । আজ আমরা মার্শাল আর্ট বলতে চীনকে চিনি , অথচ ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ হয়ে আছে আমাদেরই দেশে এই বিদ্যার প্রচলনের ইতিহাস । শুধু মার্শাল আর্ট নয় , রুদ্রমা দেবী মল্ল যুদ্ধ ও তরবারি ব্যবহারেও নিপুণ ছিলেন । তার এই শক্তিশালী সাম্রাজ্যের কাছে গঙ্গা বংশ এবং যাদব বংশ পর্যন্ত পরাজয় স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিল । শুধু রুদ্রমা নন , এই সময়ে সমগ্র দক্ষিণ ভারত বেশ কিছু শক্তিশালী রানীর উত্থান দেখেছিল -- যেমন মহারাণী আববাক্কা, যার শক্তির কাছে পর্তুগিজ পর্যন্ত পরাজিত হয়েছিল ; মহারাণী কেলাডি চেননামমা , যিনি মুঘল সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন । মারাঠারা পর্যন্ত তার শক্তি এবং সাহসিকতায় মুগদ্ধ হয় ; মহারাণী কিততুর চেননামমা , যিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে আমৃত্যু লড়াই করে গেছিলেন ।
এরকম অসংখ্য বীর নারীদের দেশ আমার ভারত । তবু আজও নারী নির্যাতন ঘরে ঘরে , আজও মহিলা জন্ম মানেই অশুচি মনে করা , মহিলা মানেই ভ্রূণ হত্যা , মহিলা মানেই গৃহবন্দি জীবন । এখানেই এ ইতিহাস শেষ নয় । সারা ভারত খুঁজে দেখবো , কথা দিলাম । যতটা ইতিহাস তুলে আনা যায় , আনবো । যদি কিছুটা উপশম হয় কোনদিন ।
উত্তর ভারতীয় সমাজ :- দক্ষিণ থেকে ফিরে আসা যাক ভারতের অন্য প্রান্তে । রাজপুত সম্প্রদায়ের বীরত্বের ইতিহাস আমরা কে না জানি । তবে তার থেকেও উল্লেখযোগ্য হলো রাজপুত সমাজের মহিলাদের ইতিহাস । ভারতের সমগ্র জাতির মধ্যে রাজপুত মহিলারাই মাথা উঁচু করে বাঁচার কথা আমাদের শিখিয়েছিল বারবার । গোন্ডওয়ানার মহারানী বাজ বাহাদুর কে পরাস্ত করেছিল এবং মুঘল সাম্রাজ্যের ওপর একক শক্তি নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল । অবশ্য শেষ রক্ষা হয় নি এবং একটি তীর চোখ বিদ্ধ করার ফলে মৃত্যু হয় তার ।
রাজপুত মহারানী পদ্মিনির বীরত্বের কাহিনী আমরা কে না জানি । আলাউদ্দিন খলজির হাত থেকে তার স্বামী রাওয়াল রতন সিং কে মুক্ত করতে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন ।
গারওয়ালের নাক কাটি রানীর বীরত্বের কাহিনীও কারুর অজানা নয় । সেখানের রানী কর্ণাবতী শত্রুদের নাক কেটে দিত বলে জানা যায় । সুনিপুন অস্ত্র কৌশল না জানলে এটা কোনদিন সম্ভব নয় । দুন উপত্যকায় তিনি মুঘল বাহিনীর ক্রমাগত আক্রমণ একাই প্রতিহত করেছিলেন । বাঙলার রানী ভবশংকরি তার বীরত্বের জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন । ভুরসূত অঞ্চলে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য তিনি একাই পাঠানদের প্রতিহত করেছিলেন । পশ্চিমের তারাবাই এর সাম্রাজ্য মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের কাছে অভিশপ্ত হয়ে উঠেছিল । তিনি বহুবার তার সাম্রাজ্যে মুঘল আক্রমণ প্রতিহত করেন , এমনকি ঔরঙ্গজেবের বহু অঞ্চলে তার বিজয় পতাকার বীজ বপন করেছিলেন ।
ভারতের স্বাধীনতার যুদ্ধের ইতিহাসে মহিলা বীরত্বের অবদান কোনদিন কোনভাবেই খন্ডন করা যায় না । ১৮৫৭ র যুদ্ধের শহীদ লক্ষ্মীবাই ও ঝলকারী বাই , মেদিনীপুরের মাতঙ্গিনী হাজরা , প্রীতিলতা ওয়াদেদার হলো সেই সমস্ত ভারতীয় মহিলা যারা সম্মুখ সমরে শুধুমাত্র দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিল । ইতিহাসের পাতায় এই তালিকা সুদীর্ঘ । আস্তে আস্তে সবই আলোচিত হবে এখানে ।
ভারতীয় মুসলিম সমাজ :- ভারতীয় মুসলমান সমাজে পর্দা প্রথার মত অভিশাপ যেমন সত্য ছিল, ঠিক তেমনই সেই সমাজের মহিলাদের বীরত্ব এক অন্যতম সত্য বলে জানা যায় । সুলতানা রাজিয়ার নাম কে না জানে । ইলতুতমিস কন্যা রাজিয়া বেগম একজন দক্ষ ঘোড়সোয়ার ছিলেন এবং তার পাশাপাশি একজন সুদক্ষ যোদ্ধাও ছিলেন । বাবার মৃত্যুর পর তিনি দিল্লির মসনদে বসেন এবং দীর্ঘদিন রাজত্ব সামলেছিলেন ।
জাহাঙ্গীর স্ত্রী নূর জাহান ছিলেন একজন বুদ্ধিমতী রমণী । সাম্রাজ্যের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জাহাঙ্গীর যেমন তার সাথে পরামর্শ করে থাকতেন তেমনই প্রয়োজন অনুযায়ী তিনি রণ ক্ষেত্রে তার স্বামীর প্রাণ রক্ষাও করেছিলেন ।
আহমেদনগর সাম্রাজ্যের চাঁদ বিবির বীরত্বের কথা ইতিহাস আজও মনে রেখেছে । মুঘলদের সাথে যুদ্ধে তিনি নিজে রণক্ষেত্রে নেমে আসেন । যদিও সে যাত্রায় শেষ রক্ষা হয় নি ।
ঊনবিংশ শতকেও আমরা দেখতে পাই ভারতীয় মুসলমান মহিলারা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সরাসরি অংশ গ্রহণ করেছিল । তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বেগম হজরত মহল , আজিজুন বাঈ প্রভৃতি ।
শুধু রাজ পরিবার অথবা সম্ভ্রান্ত পরিবারে নয় , ভারতীয় সাধারণ মহিলাদের শক্তির কাহিনী ইতিহাসের পাতায় পাতায় ভরে আছে । আমরা আসলে ইতিহাস পড়ে গেছি চিরকাল , জানতে চাইনি কোনদিন । হামপি গুহাচিত্র এবং বেলুর গুহাচিত্রে মহিলাদের মল্লযুদ্ধে অংশগ্রহনের ছবি পাওয়া গেছে । এর থেকে পরিষ্কার যে ভারতীয় মহিলারা নানা রকম আত্মরক্ষা কৌশল জানতো এবং মার্শাল আর্টসের বিভিন্ন কলাকৌশল যেমন সিলাবাম ( লাঠিখেলা ), কুস্তি , কলারি প্রভৃতি বিষয়ে বিস্তর জ্ঞান ছিল । তবে একটা প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই উঠে আসে -- তারা কি সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল কোনদিন । তার উত্তর অবশ্যই সদর্থক । আগামী পর্বে ভারতীয় সাধারণ মহিলাদেরই বীরত্বের ছবি তুলে ধরবো আপনাদের সামনে ।
ভারতীয় সাধারণ মহিলা সমাজ :- আগেই বলে এসেছি ভারতীয় মহারানী শুধু নয় সাধারণ ঘরের মহিলাদের বীরত্বের গল্প এদেশের পাতায় পাতায় রয়েছে অমর হয়ে । আমরা হয়তো সেসব জানার চেষ্টা করি নি , অথবা এই সমাজ সেসব জানতে দেয়নি । ওনাকে ওববাভা হায়দার আলীর সাথে লড়াই করে তার প্রায় একশত সৈন্য একাই হত্যা করেছিলেন । মল্ল যুদ্ধে বহু ভারতীয় মহিলা ভারতীয় মহারাজদের কুপোকাত করেছেন এমন নিদর্শন বহু শিলালেখ থেকে আমরা জানতে পেরে থাকি ।
বর্তমানে আমরা উন্নতির দিকে যত এগিয়েছি তত মহিলা সুরক্ষা নিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়ার চেষ্টা করছি । তবু প্রশ্ন থেকে যায় আজ সত্যিই মহিলারা সুরক্ষিত তো ? প্রশ্ন থেকেই যায় আজও গভীর রাতে নারীরা পথে ঘাটে নিরাপদ তো ? নারীদের নিরাপত্তা যদি সত্যিই বেড়েছে তবে তাদের সংরক্ষণের দাবি ওঠে কেন ? রাজস্থানের এমন একটি জায়গা আছে যেখানে এখনো সহমরন প্রথা চালু আছে । গ্রামের দিকে , নারী জন্ম আজও কতটা অশুচি । আজও মাসিক হলে মেয়েদের পুজোর ঘরে ঢোকা নিষেধ । আর সবশেষে নিজের মাকে প্রশ্ন করে দেখুন বিয়ের মণ্ডপে বাবার পাশে তার বসার অধিকার আছে কি না ?
আসলে ছেলেদের পরিচালিত সমাজ ব্যবস্থা এর জন্য দায়ী । তারা আসলে যাই করুক তাই ঠিক , মেয়েরা নয় । পুরান থেকে বর্তমান -- এই নিয়মেই বাঁধা । এ নিয়ে একদিন লিখবো । সেদিন হয়তো পুরুষদের চক্ষু শূল হবো । তবু লিখবো । পুরুষ সমাজ যে কত বড় অপরাধী তা না বললে অন্যায় হবে।
ভারতীয় সমাজ -- দাঁড়িপাল্লার দুটো দিক :- সমাজ গঠনের প্রয়োজন মানুষ ঠিক কবে থেকে উপলব্ধি করলো তা বলতে না পারলেও , একটা কথা অনায়াসে বলাই যায় মানুষের ওপর মানুষের নির্ভরশীলতা মানুষকে সমাজ গঠনে বাধ্য করেছিল । এক বিখ্যাত ইংরেজি প্রবাদ অনুযায়ী , " Necessity is the mother of all invention " । সমাজও মানুষের কাছে এমনই এক প্রয়োজনীয় আবিষ্কার ছিল । তবে আজকের সমাজ ব্যবস্থা আর সমাজ ব্যবস্থার প্রথম ধাপটি কিন্তু মোটেই এক ছিল না । জঙ্গলে বসবাসকারি আদিম মানুষগুলো একে অপরের প্রয়োজনে সমাজ গঠন করে , ফলে সেই সমাজে এক সুন্দর সমন্বয় ছিল ; কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক ক্ষীণ হয়ে ওঠে , ফলে সমাজের দাঁড়িপাল্লা হয়ে উঠতে শুরু করে একপেশি ।
সমাজ ব্যবস্থার দিকে আলোকপাত করলে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে সামাজিক বিভেদ শুধু ধর্মের ভিত্তিতে নয় , অর্থের ভিত্তিতে নয় , লিঙ্গের ভিত্তিতেও গড়ে উঠতে থাকে । আর এর মূলে ছিল পুরুষদের অবাধ ক্ষমতা পেয়ে যাওয়া । স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষমতা লোভের জন্ম দেয় এবং পুরুষেরা এই লোভের বশীভূত হয়ে নারীদের উপভোগ্য বস্তু বলে গড়ে তুলতে শুরু করে । নানা অছিলায় গার্গী মৈত্রীদের সমাজে নারীদের বন্দি হতে হয় চার দেওয়ালের মধ্যে । এই তো আমাদের দোরোখা সমাজ যেখানে মেয়েদের জন্য বাল্য বিবাহ , সহ মরন , একাদশী , হালালা , তিন তালাক এর মত ঘৃণ্য নীতি প্রচলিত । আবার সেই মেয়েকেই এই সমাজ কি সুন্দর পুজো করে কুমারি হিসাবে ।
বিদ্যাসাগর , রামমোহনের মত কিছু পুরুষ মেয়েদের জন্য এগিয়ে এলেও অধিকাংশরাই নীরব । জানিনা তারা ভুলে যায় কেন --- ".... ওই কোমল স্তনের দুগ্ধ হতেই এই পুরুষ জাতির জন্ম " ।
Comments
Post a Comment